কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের দিনমজুর কোরবান আলীর ছেলে মোকারাম মিয়া (২৩)। চিকিৎসকরা বলছেন, তার শরীরে বাসা বেঁধেছে লিপোড প্রোটিনোসিস নামের এক বিরল রোগ। টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ রোগ নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছেন তিনি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তার শরীরে এ রোগ ধরা পড়ে। যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার মাঠে থাকার কথা, সে বয়সে বিরল এ রোগে কাতরাচ্ছেন তিনি। ইচ্ছে করলেও হাঁটতে পারেন না, বসতে পারেন না ঠিকমতো। পুরো শরীর ঢেকে গেছে এ রোগে। অসহ্য ব্যথা নিয়ে কষ্টে আছেন এ কিশোর।
ছেলেকে সুস্থ করতে শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করেও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি মোকারামের বাবা। এমন অবস্থায় বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন দিনমজুর বাবা কোরবান আলী।
জানা গেছে, জন্মের পর থেকে মোকারাম সুস্থ ও সবল ছিল। নিয়মিত পড়াশোনা ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালোভাবেই খেলাধুলা করে সময় কাটত। হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয় তার। বাবা ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। দীর্ঘদিন ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়ে কাজ না হলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তারা। ততদিনে মোকারামের পুরো শরীর ঢেকে গেছে লিপোড প্রোটিনোসিস নামের এ বিরল রোগে। এরই মধ্যে মোকারামের মা মারা যান।
ঢাকার পিজি হাসপাতালে ৪ মাস চিকিৎসা নিয়ে অর্থের অভাবে হতাশ হয়ে ফিরে যান পরিবারটি। চিকিৎসকরা বলছেন, বিরল এ রোগটি উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো সুস্থ হতে পারে। তবে এ রোগের চিকিৎসা খরচ খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে পরিবারটি।
মোকারাম বলেন, সারাদিন বিছানায় শুয়ে দিন কাটে। ইচ্ছে করলেও হাঁটতে পারি না। খেলতে পারি না। খুব কষ্ট হয়। খাবারের রুচি দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমি সুস্থ হতে চাই।
মোকারামের বাবা কোরবান আলী বলেন, আমার ছেলে ছোট থেকেই এ রোগে আক্রান্ত। অনেক চিকিৎসা করেও সুস্থ করতে পারিনি। আমার ছেলে অনেক মেধাবী। পড়ালেখা করার খুবই ইচ্ছে কিন্তু তার শরীরের যে করুণ অবস্থা। বিছানা থেকে উঠতে পারে না। ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। দিন দিন শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পারা কতটা কষ্টের তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, সরকার ও দানশীলদের কাছে আমার জোর দাবি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলে খুবই ভালো হতো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ছেলেটি ৬ বছর বয়স থেকে এ রোগে ভুগছে। অনেক চিকিৎসার পরেও সুস্থ হয়ে ওঠেনি। এদিকে তার চিকিৎসার পেছনেই জমিজমা বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে অসহায় পরিবারটি। যদি উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে সুন্দর জীবন ফিরে পেত মোকারাম মিয়া।
কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, এটি অত্যন্ত বিরল একটি রোগ। জন্মের ৬ বছর থেকে এটি রোগীর দেহে দেখা দিয়েছে। লিপোড প্রোটিনোসিস রোগের কারণে রোগীর সর্বশরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে যায়। অ্যাডরিন্যাল ইনসাফিশিয়েন্টের কারণে এটি মানুষের শরীরে আক্রান্ত হয়। এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। উন্নত চিকিৎসা করালে মোকারাম হয়তো সুস্থ হতে পারবে।
মন্তব্য করুন