নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ম্যাজিস্ট্রেট দেখে দোকান রেখে পালালেন বিক্রেতারা

ম্যাজিস্ট্রেট দেখে বাজারে মুরগির দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান বিক্রেতারা। ছবি : কালবেলা
ম্যাজিস্ট্রেট দেখে বাজারে মুরগির দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান বিক্রেতারা। ছবি : কালবেলা

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় রাখতে নারায়ণগঞ্জের বাজার মনিটরিং করেছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে শহরের দিগু বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট দেখে দোকান রেখে পালিয়ে যান মুরগি ও সবজি বিক্রেতারা।

এ সময় বাজারে ক্রেতাদের ব্যাপক আনাগোনা ছিল। সবকিছু মূল্যবৃদ্ধি দেখে তাদের মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামই চড়া।

বাজারে এক মুরগি দোকান থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বয়লার মুরগি কিনছিলেন শফিক মিয়া। তিনি বলেন, দুই আগে ছিল ২০০ টাকা আজ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে গেল কেন। আর কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। দেখার কি কেউ নেই। নিয়মিত বাজার মনিটরিং প্রয়োজন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দিগুবাজাতে প্রায় ১০-১২টি মুরগি ব্যবসায়ী দোকান রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। লেবুর দোকান রেখে দোকানি দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ৪০ টাকার শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। প্রতি হালি লেবু বিক্রি করছেন ১০০-১২০ টাকায়। রোজার জন্য লেবু কিনতে আসা ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ পায়।

ভোক্তা সুমি জানান, সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ডাবল হয়ে গেছে। একটু আগে ১০০ টাকা হালি লেবু বিক্রি করেছে। এখন ম্যাজিস্ট্রেট দেখে দোকান রেখে পালিয়ে রয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লেবুগুলো আমাদের মাঝে বিলিয়ে দেন। বেশি দাম রাখার এটাই ওনার শিক্ষা হবে।

ম্যাজিস্ট্রেট দেখে পালিয়ে থাকা বাতেন নামে এক লেবু বিক্রেতা তার দোকান থেকে একটু দূর দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে দোকানের সামনে আনা হয়। লেবুর দাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, প্রতি হালি লেবু ৫০-৬০ টাকা। এ সময় তার কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ভোক্তারা। এই দোকানিকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ শাখা। পরে বাতেন বলেন, আড়ৎদার বেশি রাখলে আমাদের তো এই দামেই বিক্রি করতে হবে। তারা দাম কম নিলে, কম দামে বিক্রি করতে পারব।

দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখতে বাজারে জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারাশিদ বিন এনামের নেতৃত্বে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্মিলিত অভিযান পরিচালনা করে।

বাজারে পালিয়ে যাওয়া দোকানিদের সামনে ডেকে আনেন ম্যাজিস্ট্রেট। বেশিরভাগ দোকানে মূল্যতালিকা না থাকায় কঠোরভাবে সতর্ক করেন তিনি। তদারকির অংশ হিসেবে লেবু হালি প্রতি ২০ টাকা কমে ও মুরগি কেজি প্রতি ২০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করার ওয়াদা করান বিক্রেতাদের। এ সময় দোকানে দোকানে মূল্যতালিকা সাটানোর নির্দেশনা দেন তিনি। সেই সাথে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে অধিক জরিমানা ও কারাদণ্ড প্রদানের হুঁশিয়ারি করেন ব্যবসায়ীদের।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফারাশিদ বিন এনাম জানান, রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আমরা তারই আলোকে আজকে বাজার মনিটরিং করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে এসেছি। এ সময় দুই সবজি দোকানিকে অতিরিক্ত দাম ও মূল্য তালিকা না থাকার অপরাধে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মূল্য বৃদ্ধি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুরো রমজান মাসজুড়েই আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে দুপুরে জেলা প্রশাসকের কক্ষে প্রশাসন, ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।

সভায় কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ভোক্তাদের ক্রয় সীমায় আনা যায়, কি কারণে দ্রব্যমূল্য এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং কীভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা যায় এ সকল বিষয়ে সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।

একদিনের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, আপনি একজন ব্যবসায়ী হয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিবেন এটা কিন্তু হয় না। ডাল এক সপ্তাহ আগে ৯০ টাকা বিক্রি করছেন, এখন তা ১১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এটা কিন্তু হতে পারে না। যার যেমন ইচ্ছা সেভাবেই কি চলবে।

সভায় ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমি কিন্তু ছদ্মবেশে যাব। আমি যে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, ডিসি- কেউ কিন্তু চিনবে না। আমি এবার অনেক জায়গায় ছদ্মবেশে বের হব। তারপরে দেখবেন হঠাৎ স্পেশাল পাওয়ারে মামলা হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে ডালের দাম যা ছিল, তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নাই। প্রত্যেকটা দোকানে মূল্যতালিকা টানাতে হবে। মূল্যতালিকা যদি কেউ না টানায় তাহলে তার জরিমানা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘হাসিনার দাম্ভিকতাই তার পতনের কারণ’

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু

বিলুপ্তির পথে কৃষি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার

কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর

মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখায় শতভাগ স্কলারশিপের সুযোগ

যশোরে আ.লীগের লিফলেট বিতরণকালে আটক ২

শাহজাহান ওমরসহ ৩ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা : ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ আসামি খালাস

শ্রম আইন আইএলওর মানদণ্ডে উন্নীত করতে সংস্কার হচ্ছে : ড. ইউনূস

দিল্লি জয়ের লড়াইয়ে বিজেপি-আম আদমি পার্টি, চলছে ভোট

১০

উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য, শিক্ষককে শোকজ

১১

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ

১২

গাজীপুরে পিকআপভ্যান খাদে পড়ে নিহত ৩

১৩

টিউলিপের লন্ডনের ফ্ল্যাটটি কি রূপপুর দুর্নীতির টাকায় কেনা?

১৪

মেসির ‘অনুবাদক’ ছিলেন রোনালদো!

১৫

বড় জনবল নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

১৬

সংবাদ প্রকাশের জেরে নীলফামারীতে সাংবাদিককে মারধর

১৭

খুলনা ও চিটাগংয়ের ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ

১৮

নেইমার: এক অপূর্ণ সম্ভাবনার জন্মদিন

১৯

সোনালি অধ্যায়ের ৪০ বছরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

২০
X