সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সরকার ঘোষিত পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বরফ কল। সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৫টি বরফ কল গড়ে উঠেছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না তারা। বরং পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে চালু করা হয়েছে বরফ কল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কলবাড়ি এলাকায় বরফ কল নির্মাণ করছেন স্থানীয় মিঠু গাজী ও ধানখালীর আব্দুর রউফ মধু নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় বরফ কল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আসলে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের ২২.০২.৪০৮৭.৩০১.৭৭.০০১.২২.২০২ নং স্মারকের পত্রে নির্মাণাধীন বরফ কলের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন তারা।
গতবছরের ১২ সেপ্টেম্বর দেওয়া ওই পত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৫ ধারার উপধারা (১ ও ৪) এবং একই আইনের ধারা ১২ মোতাবেক পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোনো এলাকায় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন/পরিচালনা করা যাবে না। পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন/পরিচালনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ওই এলাকায় নিষিদ্ধ কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরুর মাধ্যমে উপধারা ৪ লঙ্ঘন করলে অন্যূন ২ বছর বা অনধিক ১০ কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনাধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এর বিধান রয়েছে। তাছাড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা।
বাংলাদেশ সরকার ১৩টি পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। এগুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিল্প কলকারখানা স্থাপন করা যাবে না। তা সত্ত্বেও সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৫টি বরফ কল গড়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে কলবাড়িতে নির্মাণাধীন বরফ কলের মালিক মো. মিঠু গাজী বলেন, আমি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বরফ নিতাম। এখন আর তাদের বরফ কল থেকে বরফ নিচ্ছে না বলে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। আর আমাদের বরফ কলের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যাব।
এদিকে, কলবাড়িতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্মাণাধীন নতুন বরফ কলে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে (স্মারক নং: ২২.০২.৪০৮৭.৩০১.৭৭.০০১.২২.২১০) চিঠি দেওয়া হলেও বিপুল পরিমাণ উৎকোচের বিনিময়ে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার মন্ডল বলেন, উপরের নির্দেশে তাদের দুই মাসের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা দুই মাসের মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র না পেলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎকে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার পত্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার আগেই এখানে বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। আমরা পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারিতে রেখেছি। তাদের এরইমধ্যে দূষণ না ঘটাতে সতর্কও করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে গড়ে না ওঠে, সেজন্য নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য কলবাড়ি এলাকায় নির্মাণাধীন বরফ কলের কাজ বন্ধ করতে এরইমধ্যে তিন দফা পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা কথা শোনেনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎকেও তাদের সংযোগ না দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারা সরকারিপত্রকে উপেক্ষা করে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিবুর আলম বলেন, শ্যামনগরের বিভিন্ন ইটভাটা নিয়ে আমার কাছে তথ্য ছিল। যে ইটভাটাগুলো এরইমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে অবৈধ এই বরফ কল নিয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন