শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, অস্ত্র নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এবং তাকে বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কলেজ প্রশাসন। শ্রেণিকক্ষে ছাত্রকে গুলির পর ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কলেজের একাধিক ছাত্রী বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ ছাত্রীদেরও উত্ত্যক্ত করতেন। আপত্তিকর ইশারা করতেন। ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। কলেজ ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। এসব বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তার সহকর্মী শিক্ষকরাও। কলেজের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হিল কাফিসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, রায়হান শরীফ এর আগেও কলেজে পিস্তল নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর তাকে সতর্ক করায় তিনি উল্টো ভয় দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হোস্টেলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদক দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তাকে বেশ কয়েকবার বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কলেজ অধ্যক্ষ।
রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক এক ধরনের সাইকো। তার মেজাজ সব সময় চড়া থাকে। মাঝে মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার খারাপ আচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়। একাধিকবার তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। তাকে বদলির জন্য কয়েক দফায় চেষ্টা করেছি। অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও বদলি করাতে পারিনি।
গুলিবিদ্ধ আরাফাত আমিন তমালের সহপাঠীরা জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফ উগ্র মস্তিষ্কের মানুষ। তিনি ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। তিনি সব সময় ব্যাগে অস্ত্র ও ছোরা নিয়ে ঘুরতেন। ক্লাসে এসে অস্ত্র টেবিলের ওপর রেখে লেকচার দিতেন। ছাত্রছাত্রীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ক্লাসে না আসতে বললে তিনি তাদেরও ভয়ভীতি এবং গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সোমবার (৪ মার্চ) পরীক্ষা চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। এ সময় আমার একটি ‘পোষা পাখি’ আছে- এ কথা বলেই তার ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করেন।
এ সময় তিনি পিস্তল দেখিয়ে বলেন, এটাই আমার পোষাপাখি। পিস্তলটি নড়াচড়া করতেই গুলি বের হয়ে তমালের পায়ে লাগে। আরেক শিক্ষার্থী লাবিবার কানের পাশ দিয়ে যায়।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি কীভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন