বয়স ৩২ বছর হলেও এখনো দেখতে ৮ বছরের শিশুর মতোই রয়ে গেছে কুড়িগ্রামের ছমির উদ্দিন। তার উচ্চতা প্রায় ৪০ ইঞ্চি। শুধু তাই নয় শিশু সুলভ আচরণ নিয়ে সারা দিন খেলাধুলাও করছেন গ্রামের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে।
বর্তমানে তার দরিদ্র বাবা-মা দেখাশোনা করলেও ছমির উদ্দিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে জন্মগত ত্রুটির কারণে এমন রোগে আক্রান্ত এসব সন্তান উন্নত চিকিৎসায় ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান চিকিৎসক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বাইরে খেলাধুলায় মত্ত থাকা শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী আছর উদ্দিন ওরফে ছমির। এক মনেই খেলাধুলা করছেন শিশুদের সঙ্গে। আবার কখনো বাবার হাত ধরে যাচ্ছেন বাজার বা অন্য কোথাও।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের চেয়ারম্যান পাড়ার মো. আজিম উদ্দিন ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে আছর উদ্দিন ওরফে ছমির। সে এখনো শিশুর মতো জীবনযাপন করলেও তার ছোট ভাই বিয়ে করে জন্ম দিয়েছেন সন্তান।
ছমির উদ্দিনের বাবা-মা জানান, জন্মের পর থেকেই সে অস্বাভাবিক। বয়স হলেও শিশুর মতোই লালন-পালন করছেন তাকে। ছেলেকে সুস্থ করতে চিকিৎসকও দেখিয়েছেন তারা। তারপরও শরীরে নানা সমস্যা নিয়ে শিশুই থেকে গেছেন ছমির উদ্দিন।
ছমিরের মা আছিয়া বেগম বলেন, যখন আমার ছেলের ২ বছর বয়স হয় তখন জানতে পারি আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। পরে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে অনেক ডাক্তার-কবিরাজকে দেখানো হয়েছে। ডাক্তার আমাকে বলছে আপনার ছেলে স্বাভাবিক হবে না। তারপরেও তাকে মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। এখন তো তার বয়স অনেক হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ছমির যেদিন কান্না শুরু করে, কান্না থামে না। যখন রেগে যায় তখন বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাকে বাড়িতে রেখে কোথাও যেতে পারি না। তার সঙ্গে সব সময় একজন থাকতে হয়। সংসারে খুব কষ্ট আমাদের। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, আমি মারা গেলে আমার ছেলেটাকে কে দেখবে।
প্রতিবেশী আকবর আলী নামের একজন বলেন, আছর উদ্দিন ছমিরকে ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধীর মতো দেখছি। সব সময় ছোট বাচ্চাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করে। ১৯৯২ সালে তার জন্ম। এখন তার বয়স ৩২ বছর হলেও ছোটদের সঙ্গেই মেশে সব সময়। ছমিরের বয়সী ছেলেরা বিয়ে করে সন্তানের বাবা হয়েছে। আর ছমির এখনো শিশুর মতোই রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, মায়ের গর্ভাবস্থায় ত্রুটিজনিত কারণে এমন খর্বাকৃতির সন্তানের জন্ম হয়। এজন্য সন্তান গর্ভে থাকার সময় নিয়মিত চেকআপ আয়োডিন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ছমির উদ্দিনকে কিছুটা হলেও সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
মন্তব্য করুন