ক্যানসার আক্রান্ত কাজলী আক্তার। স্বামী শহিদুল ইসলামকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন বারবার। তিনি বলেন, গত সোমবার ৫০ থেকে ৬০ জন অজ্ঞাতপরিচয় লোক তাদের বাড়িতে যান। তারা নিজেদের যুবদল ও শ্রমিকদল নেতাকর্মী বলে দাবি করেন। প্রথমে তারা নিহত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন। পরে কাজলী বেগমকে নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে শহিদুল ‘বিএনপি করতেন’ বলে দাবি করতে বলেন। কথা শুনলে, দুই থেকে তিন হাজার লোক নিয়ে তারা আন্দোলন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ওই সময় শহিদুল ইসলামের স্ত্রী কাজলী বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে অথই সাগরে পড়েছি। এর মধ্যেই আমাদের নিয়া রাজনীতি শুরু হইছে।’ টাকার লোভে তিনি স্বামীর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না বলে চেঁচামেচি শুরু করেন। পরে দ্রুত ওই বাড়ি ত্যাগ করেন তারা।
অবশ্য গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আকতারুজ্জামান বাবুল বলেন, পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে তাদের বাড়ি (রাজাবাড়ির মিটালু) গিয়েছিলাম। কোরো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়।
এদিকে পরিবারটির ওই করুণ দুর্দশার কথা জেনে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে নিহত শহিদুল ইসলামের বাড়িতে যান গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। ওই সময় চিকিৎসার জন্য কাজলী বেগমকে নগদ অর্থ সহায়তা দেন তিনি।
এ ঘটনায় ন্যায়বিচার পেতে সব সময় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকে তারা বিএনপি বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।’
নিহত শহিদুল ইসলাম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের মিটালু গ্রামের মৃত আজমত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন বলে জানান স্থানীয় এমপি। গত ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ী এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন তিনি। পরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মন্তব্য করুন