লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে ভরপুর দেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সংরক্ষণে সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে এসব চোখে পড়ে না। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তর ও আশপাশের বিদ্যুতায়িত এলাকায় ৩৩ হাজার কেভি হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। প্রায়ই স্তন্যপ্রায়ী বন্যপ্রাণী যেমন বিরল ও বিপন্ন উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমা পরা হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বাদুরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বনাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিচরণকালে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় উদ্যানের ফুলতলী এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে কোনো কভারই লাগানো হয়নি। এ ছাড়া উদ্যানের ভেতরের বাংলোর আশপাশসহ ভেতরের অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক তারেও নেই কোনো কভার। এ ছাড়া প্লাস্টিক কভার লাগানো অনেক তারেও কভারের টেম্পার চলে যাওয়ায় সেগুলোতে স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী ক্রমাগত আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে উদ্যানের অভ্যন্তরে একাধিক অবৈধ চোরাই বৈদ্যুতিক সংযোগ লাগানোর অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে বন বিভাগের লোকজন পল্লী বিদ্যুৎকে কোনো কিছু বলার সাহস রাখেন না বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বন্যপ্রাণী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাখিপ্রেমিক সোসাইটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল। তিনি বলেন, বন বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ তীব্র অবহেলা করছে এই কাজে দেখেও দেখছি না তারা। জাতীয় উদ্যানের কর্তৃপক্ষ পর্যটনের মাধ্যমে ব্যাপক আয় করছে। কিন্তু বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। অনেক অংশেই কভার লাগানো হয়নি। বিদ্যুৎ অফিস, বন বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আমরা একাধিকবার ছবি ও ভিডিওসহ প্রেরণ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা। এটা তাদের চরম পেশাগত অবহেলা। বন্যপ্রাণীকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করার কোনো অধিকার তাদের দেওয়া হয়নি।
বিশ্বজিৎ পালের আরও অভিযোগ,জাতীয় উদ্যানের ভেতরে একাধিক অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে। যেগুলোর বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ এ বিষয়ে বন বিভাগ উদাসীন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) গোলাম ফারুক মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা খুঁজে পাচ্ছি না কোথায় কভার পরানো নেই। এখানে আমাদের তেমন অবহেলা নেই বন বিভাগের উচিত আমাদেরকে ভুল ধরিয়ে দেওয়া। আমাদের দায়িত্ব সাধ্যমতো করার চেষ্টা করছি।
এদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিট অফিসার আনিসুর রহমান সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যামেরা দেখে স্থান ত্যাগের চেষ্টা করেন। বারবার তাকে জাতীয় উদ্যানের ভেতরে একাধিক অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইনে ও গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভ ফরেস্টের আশপাশে কভারবিহীন বৈদ্যুতিক তারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পাশ কাটিয়ে ঘটনা অস্বীকার করেন।
মৌলভীবাজার জেলার সহকারী বন সংরক্ষণ জামিল মোহাম্মদ খান, কী পরিমাণ কভার প্রয়োজন; পুরো উদ্যানজুড়ে সেই চাহিদা মোতাবেক পল্লী বিদ্যুৎকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত একটি ভালো ফলাফল আমরা আশা করছি। তবে অবৈধ চূড়ায় বৈদ্যুতিক লাইনের বিষয়ে আমি জানি না, খতিয়ে দেখব বিষয়টি।
কমলগঞ্জ উপজেলার ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ এবং বন বিভাগের দেখা উচিত। তবে অবশ্যই আমি তাদেরকে বিষয়টা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব। কভারবিহীন বৈদ্যুতিক তারে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণীগুলো প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎস্পর্শে আহত অথবা মারা যাচ্ছে। যেসব প্রাণী আহত হচ্ছে তারা বংশপরম্পরায় প্রজাতির মধ্যে ক্ষতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এটি বন্যপ্রাণীর প্রজন্মকে নষ্ট ও ধ্বংস করার চক্রান্ত হতে পারে বলে অনুমান করছেন বন্যপ্রাণী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের কয়েকজন সদস্য।
মন্তব্য করুন