মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে প্রথমবারের মতো সৌখিনতার বশবর্তীতে পরীক্ষামূলক এক ধরনের ভেষজ জাতীয় খাদ্যশস্য চিয়া সিডের চাষ করা হয়েছে জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার ঘুণী গালা গ্রামের ডা. ইমরান খান ও ঝিটকা উজানপাড়া গ্রামের ডা. মো. ইউনুস আলী শখের বশে এই চিয়া সিডের চাষ করেন। এরা পেশায় দুজনই পল্লী চিকিৎসক। এ ছাড়াও গোয়ালবাগ ও আজিমনগর এলাকার দুই কৃষক এই চিয়া সিডের চাষ করেছেন বলেও জানা যায়।
গোয়ালবাগ এলাকায় চিয়া সিড ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, চিয়া সিডের গাছগুলো অনেকটা তিল গাছের মতো। ফলগুলোও তিলের আকৃতিতে বাতাসে দুলছে। ফলের ভারে ও বাতাসে অনেক গাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় তিন বিঘা জমিতে নিজস্ব উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে চার ব্যক্তি এই চিয়া সিডের চাষ করেছেন। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের মতো। এটি সাদা, কালো ও বাদামি রঙের হয়ে থাকে। খাওয়ার আগে পানিতে ভেজানোর পর এর আয়তন ১০ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। রোপণের তিন মাসের মধ্যে যখন ফুলগুলো বাদামি আকার ধারণ করে, তখন ফুল হতে চিয়া সিড সংগ্রহ করা হয়।
ঘুণী গালা গ্রামের ডা. ইমরান খান কালবেলাকে জানান, আমি ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিওতে এই চিয়া সিডের গুণাবলি দেখেছি। এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। বিশেষ করে ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। আমি নিয়মিত বাজার থেকে কিনে চিয়া সিড ভিজিয়ে সরবত তৈরি করে পান করি। তাই ভাবলাম পরীক্ষামূলকভাবে এটি চাষ করলে কেমন হয়। পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মানিকগঞ্জ থেকে বারি চিয়া-১ জাতের বীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে চাষ করি। এতে আমার প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হলে আমার ব্যক্তিগত চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভবানও হতে পারব। তবে ফলন ভালো হলে আগামীতে আমি ৫/৬ বিঘা জমিতে চিয়া সিড চাষ করব, ইনশাআল্লাহ।
ঝিটকা উজানপাড়া গ্রামের ডা. মো. ইউনুস আলী দেওয়ান বলেন, আমি সবসময় বিভিন্ন ভেষজ জাতীয় দানা দিয়ে সরবত পান করি। এর মধ্যে চিয়া সিডের বিষয়টি ইউটিউবে দেখে চাষের আগ্রহ জাগে। পরে বীজ সংগ্রহ করে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আমি ১৭ শতাংশ জমিতে চিয়া সিডের চাষ করি। গাছগুলো দেখতে ভালোই হয়েছে। আশা করি, ফলন ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান কালবেলাকে জানান, এ উপজেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে চারজন চিয়া সিড চাষ করেছে শুনেছি। যদি ফলন ভালো হয় তাহলে আগামীতে আমরা ব্যাপক আকারে চিয়া সিড চাষে কৃষককে সর্বাত্মক সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন