রাজধানী ঢাকার ডেমরায় শুরু হয়েছে প্রায় ২৯৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী সুধারাম বাউলের ভক্ত বাউলদের তিথি মেলা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ৫ মার্চ পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডেমরা ও আশপাশের এলাকার ৩০ গ্রামের মানুষের একমাত্র বাউল আশ্রম এটি। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন এক ঐতিহাসিক নিদর্শন এটি। আর এ আশ্রমকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে মেলা, যা বাউলের মেলা হিসেবে পরিচিত।
ডেমরার কায়েতপাড়া গ্রামের বাউলের বাজারে (বাউল্লা বাজার) ২৯৪ বছর পূর্বে আবির্ভূত হয়েছেন বাক্য সিদ্ধা মহা পরম পুরুষ শ্রী শ্রী সুধারাম বাউল। এ বাজার শুধু অর্থের বিনিময়ে মালামাল কেনাবেচার নয়। এখানে বাউল ভক্তদের মিলনমেলা হয় বলে এর নাম বাউলের বাজার। সময়ের স্রোতে এখানে গড়ে ওঠেছে বাবার আশ্রম। তখন থেকেই প্রতি বছর বাউলদের তিথি মেলার প্রচলন শুরু হয়। লোকমুখে শোনা যায়, ২৯৪ বছর ধরে এই মেলার প্রচলন। লাখ খানের বেশি লোকের সমাগম হয় মেলাতে। এ সময় দেশ-বিদেশ থেকেও অনেক বাউল ভক্ত আসেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় কুটিরশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরি কুটিরশিল্প পণ্য, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, মিষ্টির দোকান, মন্ডা মিঠাই, মুড়ি-মুড়কিরসহ অগনিত দোকানে নারী-শিশুসহ সবাই কেনাকাটা করছেন। এবার মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো কামারদের তৈরি দা, বঁটি, কাচি, ছেনিসহ বিভিন্ন রকমের গৃহস্থালি জিনিসপত্র। এসব দোকানে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে জানায় দোকানিরা।
এ ছাড়া নাগরদোলা ও নৌকাসহ বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থাপনা আকর্ষণ করছে মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের। এবার মেলায় মোট দেড় শতাধিক বিভিন্ন রকমের দোকান রয়েছে।
নারায়নগঞ্জের মুড়ি-মুড়কির দোকানদার মো. নাহিদ মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা অনেকটাই কম।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, সারাদিন মেলা প্রাঙ্গণে বেচাকেনার পরে রাতে শুরু হয় বাউল গানের আসর। দেশের খ্যাতিমান বরেণ্য বাউল শিল্পী এখানে গান পরিবেশন করেন। এ সময় আয়োজন করা হয় খিচুড়ি প্রসাদসহ বিভিন্ন রকমারি সব খাবার দাবার।
আশ্রমের পুরোহিত পরিমল চক্রবর্তী জানান, দেশ বিদেশের দূর-দূরান্ত থেকে বাউল ভক্তরা এখানে এসে মনো আকাঙ্খা পূরণে মানত করেন। মনস্কাম সিদ্ধি হলে বাবার পিঠস্থান। এ আশ্রম ও মন্দির দেশের অন্যতম কালের সাক্ষী। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এটির প্রতি যত্নবান হলে এ আশ্রম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী আশ্রম, মন্দির ও হিন্দু স্থাপনাগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট ও বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নজরদারি ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও সুধারাম বাউল আশ্রমে কোন নজরদারি নেই। এ আশ্রমের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা অবশ্যই প্রাচীর নির্মাণ করে গেট স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য দেশের দাতা সংস্থা, বড় বড় ব্যবসায়ী ও মন্দির উন্নয়নে যারা জড়িত তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য করুন