প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ইমিগ্রেশনসহ বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে কাস্টমস ভবনের সামনে পায়চারি করছেন নেপাল সূত্রধর সঙ্গে তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মগর এলাকার বাসিন্দা। যাবেন চট্টগ্রাম আত্মীয়ের বাড়ি। সাথে করে নিয়ে এসেছেন ভারতীয় রুপি। তিনি রুপি বিনিময় করে বাংলা টাকা কোথায় থেকে নিবেন তা খোঁজ করছেন। স্থলবন্দর থেকে রেলওয়ে স্টেশন এবং স্টেশনে গিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার টিকিট নিতে তার বাংলা টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এই স্থলবন্দরে কোন ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জে (মুদ্রা বিনিময় বুথ) না থাকায় তিনি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলছে। পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ায় ২০০৮ সালে স্থল শুল্কস্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে আখাউড়া স্থলবন্দর। দিনে দিনে যাত্রীদের কাছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পছন্দের পথ হয়ে উঠেছে আখাউড়া স্থলবন্দরটি। যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বাবদ রাজস্ব আহরণও বাড়ছে। তবে যাত্রী পারাপার ও রাজস্বের পরিমাণ বাড়লেও সোনালি ব্যাংকের একটি বুথের মাধ্যমে শুধু মাত্র ভ্রমণ করা নেওয়া হয়। মুদ্রা বিনিময় বুথ অথবা মানি এক্সচেঞ্জে নেই আখাউড়া স্থলবন্দরে।
চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াত করেন। বিভিন্ন উৎসবে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়। পণ্য রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি সরকার যাত্রীদের ভ্রমণ কর বাবদও বিপুল রাজস্ব পায় বন্দরটি থেকে।
আখাউড়া স্থলবন্দর পার হলেই আগরতলা শহর। সেখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিলেই আগরতলা বিমানবন্দর। এ ছাড়া রেলস্টেশনও শহরের কাছাকাছি। ফলে আকাশ ও রেলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশি যাত্রীরা দেশটির পর্যটন শহরগুলোয় যাতায়াত করতে পারেন। এতে খরচও সাশ্রয় হয়। মূলত এসব কারণেই আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার হয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৪ জন আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে যাত্রী পারাপার হয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৬৫ জন যাত্রী। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯৩ জন যাত্রী।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আখাউড়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে কথা হয় ফজলুর রহমান ও আকাশ মিয়া নামে দুজন ভারতীয়ের সাথে তারা ইজতেমায় গিয়ে ছিলেন এখন ফিরে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় রুপি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। পড়ে দালালের মাধ্যমে অনেক কম মূল্যে রুপির বিনিময়ে বাংলা টাকা নেন।
তারা বলেন, এ বন্দরে ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জে থাকাটা খুব জরুরি। কারণ এপথে প্রতিদিন বহু মানুষ যাতায়াত করে থাকে মানি এক্সচেঞ্জে বা ব্যাংক নাথাকায় ভারতীয় রুপি ও বাংলা টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন ঢাকার বাসিন্দা জামিল রহমান- তিনি বলেন, তার ডলার এন্ডোস করা আছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে তিনি বাংলা টাকা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে। ওপার গিয়ে বিনিময় করে ভারতীয় রুপি নেবেন। এ বন্দরে যদি ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জে থাকতো তাহলে তার ভোগান্তি কম হতো। কারণ ওপারে বাংলা টাকা বিনিময় করলে তার সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এই বন্দরটি ব্যবসা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ জন্য এখানে ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জের খুব প্রয়োজন।
ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জে না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার কালবেলা কে বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর আখাউড়া। দিন দিন এপথে যাত্রী পারাপার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সরকারেরও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে যদি সোনালি ব্যাংকের একটি শাখা বা মানি এক্সচেঞ্জে হয় তাহলে যাত্রীরা সহজে তাদের টাকা বা ভারতীয় রুপি বিনিময় করতে পারতো।আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। এই সমস্যা সমাধান হলে এই স্থলপথ হবে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ।
মন্তব্য করুন