‘আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। আমরা কাপড়ের তৈরি শহীদ মিনার বানিয়ে তাতে ফুল দিই। এবার স্কুল বন্ধ, তাই বাবার চায়ের দোকানে কাজ করছি।’ এভাবেই কষ্টের কথা বলেন শিক্ষার্থী নিশান হোসেন। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গোড়শাহী জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষার্থী সে। শুধু নিশান হোসেন নয়, তার মতো অনেক শিক্ষার্থী তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি।
আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ও স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারির বাহাত্তর বছর পূর্ণ হলো। যথাযোগ্য মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নওগাঁয় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
তবে এবারও নিজের প্রতিষ্ঠানে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষার্থীকে যেতে হয়েছে নিকটবর্তী শহীদ মিনারে।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা এবং প্রি- ক্যাডেট মিলে মোট ২১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
উপজেলার একটি মাদ্রাসাতেও শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ৪১ ভাগ প্রাথমিক, ৯০ ভাগ মাধ্যমিক ও ৬৫ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। বদলগাছী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো আমিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৩টি। এরমধ্যে মাত্র ৯৮টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। এছাড়া প্রি-ক্যাডেট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬। সব মিলিয়ে ১৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬১টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।
উপজেলার অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার অঞ্জন কুন্ডু বলেন, উপজেলায় ৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। ১৭টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও শহীদ মিনার নেই। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষা হীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি।
বদলগাছী উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তারপরও সব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলার ফতেজংগপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেশীরভাগ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে আমরা উপজেলা শহীদ মিনারে ১২টা ১ মিনিটে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কোনো বরাদ্দ নেই। এটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ (কমিটি) স্থানীয়ভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে নির্মাণ করতে পারেন। ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি-বেসরকারিভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য করুন