মো. মিরাজ সিকদার, শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

১৩০ টাকায় শুরু করা নার্সারির বাজারমূল্য ২০ লাখ

নিজের নার্সারিতে ফুল গাছের পরিচর্যা করছেন সাইফুজ্জামান সুমন। ছবি : কালবেলা
নিজের নার্সারিতে ফুল গাছের পরিচর্যা করছেন সাইফুজ্জামান সুমন। ছবি : কালবেলা

রাজধানীর সরকারি বাংলা কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে ব্র্যাক ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরি করেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়ার যুবক সাইফুজ্জামান সুমন। তবে চাকরি জীবন তাকে শান্তি দিতে পারেনি। স্বাধীনচেতা সুমন হঠাৎ চাকরি ছেড়ে বেকার হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কী কাজ করবেন, কীভাবে জীবন সাজাবেন সেই চিন্তায় দিক হারিয়ে ফেলেন। এক সময় গান ও বাঁশির সুর দিয়ে যিনি আনন্দ দিতেন প্রিয় মানুষগুলোকে। তার জীবনেই যেন বিষাদের হাওয়া।

নিজের হতাশামাখা জীবনকে কর্মময় করতে ছাদ বাগান শুরু করেন সাইফুজ্জামান সুমন। একটা সময় এ ছাদ বাগান তাকে রাস্তা দেখায় বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি গড়তে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের নেতিবাচক কথা শুনেও নিজের সিদ্ধান্তে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে মাত্র ১৩০ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তালুকদার এগ্রো নার্সারি। যার বর্তমান বাজারমূল্য ২০ লাখেরও বেশি। এখন জেলায় সবচেয়ে দামি ও দুর্লভ প্রজাতির ফল, ফুল, কাঠ ও ঔষধি গাছের চারা এখন সুমনের নার্সারিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় ৩০ শতক জায়গায় সুমন গড়ে তুলেছেন চোখ ধাঁধানো দৃষ্টিনন্দন এক নার্সারি। তার নার্সারিতে এখন প্রায় ৪০০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ৩০ হাজার চারা উৎপাদন করা হয়েছে। প্রায় ১০০ প্রজাতির ফুল, ১৫০ প্রজাতির ফল ৫০ প্রজাতির ঔষধি, ৫০ প্রজাতির বনজ ও ৫০ প্রজাতির বিদেশি দুর্লভ চারা নিয়ে নিয়ে তার সংগ্রহশালা। নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স করে তার নাম দিয়েছেন তালুকদার এগ্রো নার্সারি। বেশির ভাগ ক্রেতাই তার নার্সারিতে এসে ঘুরে ঘুরে মনের মতো চারাগুলো কিনে নিয়ে যায়। এক একজন ক্রেতা ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার চারা কিনে নিয়ে যায়।

ফুল গাছের মধ্যে ইনকাগাদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, জিনিয়া, রক্ত চন্দন, এরোমেটিক জুঁই, মাধবিলতা, টিউলিপ, প্যানচাটিয়া, কাসুল্লাহ, গোলাপ, পুটিয়া, নয়ন তারা, পানাকি, ইন্ডয়ান জবা, বেলী, ডায়ান্থাস, স্টার, চায়না টগর চেরিসহ নানা ধরনের ফুল। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে দেশি বাতাবি লেবু, নাগপুরী কমলা, স্ট্রবেরি, মালবেরি, তুতফল, ডুরিয়ান, এবোকাদো, করসল, রামবুতান, পাকিস্তানি আনার, থাই পেয়ারা, চায়না পেয়ারা, থাই জামরুল, বোম্বে লিচু, ড্রাগন, তিন ও আপেল ফল ইত্যাদি।

মশলা জাতীয় চারার মধ্যে রয়েছে কাজুবাদাম, আলুবোখারা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা ও গোলমরিচ। বিদেশি আম, মিয়াজাকি,বরুনাইকিং, ডকমাই, আমেরিকান ব্লাকস্টোন, চাকাপাত, হানি ডিউ। এ ছাড়াও পার্থেনিয়াম, এলোভেরা, ক্যাকটাস, লাল-হলুদ-সবুজ ক্যাপসিকাম, বাগান বিলাস, কাঠ ঝাউ, থুজা ঝাউ, ছোট জাতের রঙ্গণ, অ্যালোভেরা, কাটামুকুট, ও নাগা মরিচের (বোম্বাই) প্রজাতির কলমের চারা পাওয়া যাচ্ছে সুমনের নার্সারিতে।

সুমনের বড় ভাই নাগেরপাড়া বহুমুখী স্কুল ও কলেজের ইংরেজি শিক্ষক মো. ফখরুজ্জামান শাহীন জানান, আমাদের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সুমন বড় একটি চাকরি করবে। ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার মাধ্যমে শুরুও করেছিল বেশ। শেষ পর্যন্ত সুমন চাকরিতে মনোযোগ দিতে পারেনি। তাই সে এলাকায় এসে বাড়ির ছাদে একটা বাগান গড়ে তোলেন। আর সারাক্ষণ গাছপালা, ফুল, ফুলগাছ এগুলো নিয়েই পরে থাকতো। ছাদ বাগান থেকে পরবর্তীতে নার্সারিকেই প্রাধ্যন্য দিল সে। নার্সারি যেন ওর নেশায় পরিণত হলো। এরপর দেখলাম ওকে এ পথ থেকে কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না, তাই পরিবার থেকে আমরাও এখন সাপোর্ট দিচ্ছি। এখন সুমন একজন আদর্শ উদ্যোক্তা। আমি সুমনের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের মেসেজ দিতে চাই। তোমরা চাকরির পিছে না ঘুরে সুমনের মতো উদ্যোক্তা হয়ে উঠো।

একান্ত সাকান্ত সাক্ষাৎকারে সুমন কালবেলাকে বলেন, বেকারত্বের দুঃচিন্তা আমাকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছিল। হাজারো হাসি, ঠাট্টা, তামাসাকে উপেক্ষা করে বেছে নিয়েছি সৎভাবে বাঁচার পথ। শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে বাড়ির ছাদে স্বল্প পরিসরে ছাদ কৃষির মাধ্যমে শুরু হয় নার্সারি তৈরির কাজ। এরপর বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে ঘুরে কার্যক্রমগুলো নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করেছি। কীভাবে চারা উৎপাদন করা যায়, কীভাবে সায়ন জোড়া দিতে হয়, কীভাবে নার্সারির মাটি তৈরি করতে হয় সব কিছু নিজে হাতে কলমে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে আয়ত্ব করেছি। আমি একাই আমার নার্সারির সকল কাজগুলো করি। যখনি আমি ক্লান্ত হয়ে যাই তখন আমার কচি কচি চারাগুলো নতুন করে শক্তি জোগায়। আমার এ নার্সারি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখায়।

সুমন আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের বলব, তোমরা চাকরির পিছে না ছুটে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করো, দেখবে আমার মতো তোমাদেরও ভাগ্য বদলে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের উপপরিচালক ড. রবীয়াহ নুর আহমেদ কালবেলাকে বলেন, নাগেরপাড়া ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোগতা সাইফুজ্জামান সুমন চাকরি ছেড়ে নার্সারি গড়ে তুলেছেন। এ বিষয়টি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির পিছে না ছুটে সুমনের মতো নার্সারি তৈরি করে ভাগ্যবদল করতে পারে। যারাই সুমনের মতো করে কৃষি কাজে এগিয়ে আসবে শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে একজন করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ চট্টগ্রাম যাবেন হাসনাত, মুন্সিগঞ্জে সারজিস

জনবল নেবে মধুমতি ব্যাংক, ৩৫ বছরেও আবেদন

রাজশাহীতে গণপিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিহত 

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দেশে ফিরলেন আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া ১৪ বাংলাদেশি

আজকের নামাজের সময়সূচি

শহীদ আমিনুলের সন্তানদের দায়িত্ব নিল ইত্তেফাকুল উলামা

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

১০

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

১১

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

১২

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

১৩

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

১৪

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

১৫

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

১৬

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১৭

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১৮

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১৯

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

২০
X