শরীয়তপুরের ডামুড্যায় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার সময় পর্যবেক্ষক হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া নামের এক শিক্ষার্থী উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় অভিযুক্ত ডা. নাফিসা ইসলামের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৭ ফ্রেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার সময় উপজেলা কাইলারায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়ার পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্ল্যাকার্ডে হাতে কয়েকশ’ মানুষ মানববন্ধনে যোগ দেন।
প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ’পর্যবেক্ষক এর শিষ্টাচারিতার অবসান হক’, ’মেডিকেল শিক্ষার্থী ছোঁয়ার মেডিকেল পড়ার সুযোগ দিতে হবে’, ’ডা. নাফিজা ইসলামের বিচার চাই’, ’একটি স্বপ্নের মৃত্যু হক বাংলাদেশ মানবে না’, ’ছোঁয়ার উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) ছেঁড়া অভিযুক্ত ডা. নাফিজা ইসলামের বিচার চাই’ বিভিন্ন লেখা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া মেধাবী শিক্ষার্থী। অন্য একজনের দোষ তার উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল পর্যবেক্ষক। কিন্তু চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হননি। তার ওএমআর শিটটি ছিঁড়ে ফেলেন। আমরা এই তীব্র প্রতিবাদ জানাই। পরীক্ষা ফল প্রকাশ করা হলেও ছোঁয়ার বিষয়টি নিয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার কোনো ধরনের তৎপর নেই। এতে করে ছোঁয়া দিন দিন একাততা হয়ে যাচ্ছে। যে কোনো সময় ও নিজে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এতে করে আমরা হারাব একটি মেধাবী জীবন ঠিক তেমনই আমাদের নতুন প্রজন্ম ডাক্তার থেকে বিমুখ হবেন।
দারুল আমান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমিনুল হক মিন্টু বলেন, পর্যবেক্ষক কখনই কোনো শিক্ষার্থী ওএমআর শিট ছিঁড়তে পারেন না। এটা বেআইনি। এটি ছিঁড়া তার অন্যায় হয়েছে। যদি হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া কোনো অবৈধপন্থা ব্যবহার করত তাহলে তার বিচার করতো। কিন্তু তার ওএমআর শিট ছিঁড়া বিচার হতে পারে না।
আবুল কালাম রতন বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি অবৈধ ডিভাইজ ব্যবহার করেছে তার পাশের একজন। কিন্তু পর্যবেক্ষক নিজের শিষ্টাচার কারণে ছোঁয়ায় ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেছে ডা. নাফিসা। আমরা এর বিচার চাই। যাতে করে আর কোনো শিক্ষার্থী জীবন নষ্ট না করতে পারে। আর হুমাইরা আবার পরীক্ষার মাধ্যমে তার সঠিক অবস্থাটা তুলে ধরতে পারে।
শিক্ষার্থী সুপ্রীতি ঘোষ বলেন, আমরা শিক্ষার্থী। যদি অন্যের দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কিভাবে পড়াশোনার মন দিব। আমাদের সাথে যে এমনটা হবে না তা তো আমি বলতে পারবো না। আমাদের স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে হবে। স্বপ্ন দেখা ভুলে যাব। আমরা চাই সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে বিচার হক।
ছোঁয়ার ফুপু সামসুর নাহার বলেন, আমার ভাতিজী কারো সাথে কথা বলে না। তা না করা কিছু তার উপর চাপিয়ে দিয়েছে পর্যবেক্ষক। এতে করে সে ভেঙে পড়েছে। আমরা এর বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক বিচার করে ছোঁয়ার যাতে করে মেডিকেলে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা করে।
উল্লেখ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা পরীক্ষা দেন হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া। তার অভিযোগ, পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট পর তার পাশের এক শিক্ষার্থী থেকে হলের দায়িত্বরত নারী পর্যবেক্ষক কানে থাকা ডিভাইস জব্দ করেন। এ সময় কানে ডিভাইস রাখা মেয়ের সঙ্গে পাশের দুই শিক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ও আরেকজনের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেন তিনি। পরে তাদের সবার উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন ওই পর্যবেক্ষক। কিন্তু ডিভাইস জব্দ করা শিক্ষার্থীর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অন্য দুজনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় পরীক্ষা শেষ হবার ৫ মিনিট আগে হুমাইরা ও তার পাশের আরেকজন মেয়েকে নতুন প্রশ্ন ও ওএমআর শিট প্রদান করেন ওই পর্যবেক্ষক। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে আর কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামাল হোসেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সন্দেহে শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র (ওএমআর) ছেঁড়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন