কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার পথে-ঘাটে, পথের ধারের ঝোঁপ-ঝাড়ে, ছোট-বড় গাছে জড়িয়ে থাকত উপকারী সবুজ লতাগুল্ম তেলাকুচা। প্রাচীনকাল থেকেই নানা রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এ লতাগুল্ম। সময়ের পরিক্রমায় আর সংরক্ষণের অভাবে এ লতাগুল্ম তেলাকুচা আজ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে।
এটি মানব দেহ ও পরিবেশের উপকারী এক লতাগুল্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coccinia grandis, তবে অঞ্চলভিত্তিক এর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে।
তেলাকুচার লতাতে সারা বছরই ফুল ও ফল ধরে। তবে অপেক্ষাকৃত বর্ষায় ফুল ও ফলের প্রাচুর্য থাকে বেশি। এর ফুলের রং সাদা, দেখতে অনেকটা লাউ ফুলের মতো। আর ফলটি দেখতে অনেকটা পটোলের মতো। এর স্বাদ তেঁতো। এ ফলটি পাকলে সিঁদুরের মতো টকটকে লাল হয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর লাল ফলটি খুব সহজেই পাখিদের লোভের শিকার হয়। শালিক, বুলবুলি, কাক ও টিয়াসহ নানা পাখিরা ফলটিকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে প্রাচীনকাল থেকেই তেলাকুচা ভেষজ ওষুধ হিসেবে নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা, লতা, ফুল ও ফল মানুষের অসুখ-বিসুখে ব্যবহার করা হয়। তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টোবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক’ রোধী এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুষ্ঠ, ঠান্ডা-কাশি,জ্বর, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস। এ ব্যাপারে সিদলাই আমির হোসেন জোবেদা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমাদের অঞ্চলে প্রায় সর্বত্র প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এ লতাটি। রাস্তার পাশেই এগুলো বেশি হয়। এঁকেবেঁকে অন্য গাছে আবার বিদ্যুতের তার আঁকড়ে বেড়ে ওঠে তেলাকুচা লতা। কোনো পরিত্যক্ত ঝোঁপ-ঝাড়ের পাশে এদের বেশি দেখা যায়। তাতে ফুলও দেখা যাচ্ছে, তবে এ লতাটি মানবদেহের জন্য বেশ উপকারী বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (ইউনানি) ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন- তেলাকুচা শিকড়, পাতা এবং কাণ্ড এ ৩টি অত্যন্ত উপকারী ভেষজগুণ সম্পন্ন অংশ। চর্মরোগ, ডায়াবেটিস ও ব্রংকাইটিস এ ৩টি রোগের ওষুধ হিসেবে এটি অধিক ব্যবহার করা হয়।
লতাটির ফল-পাতা সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু কিছু দেশে এ ফলটি স্যুপ হিসেবে ও এর পাতাগুলোও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। দিন যতই যাচ্ছে মানুষ বাড়ছে। ফলে আবাসস্থলসহ কৃষিজমি তৈরি হচ্ছে। এভাবেই প্রকৃতি থেকে ঝোঁপ-ঝাড়, জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার ফলে এ গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিকিৎসাব্যবস্থা ইউনানি চিকিৎসাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউনানি চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন এবং ফ্রি বিতরণের জন্য ভেষজ ওষুধ দিয়েছেন। আমি মনে করি নাগরিক হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদ ও গাছের পরিচর্যা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রাকৃতিক সম্পদ উদ্ভিদ ও গাছের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন