মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের এক সময়ের খরস্রোতা ধলাই নদ এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। চর জেগে ওঠায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এককালের খরস্রোতা এ নদটি। চার বছর আগের অপরিকল্পিত খনন ও সংস্কারের অভাবে এ নদটি এখন নাব্য হারাচ্ছে।
শতাধিক চর সৃষ্টি হওয়ায় নদীটি এখন তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। গভীরতা কমে যাওয়ায় মানুষ হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে ধলাইর বুক দিয়ে। অনেক স্থানে নদীর বুক যেন এখন আবাদি জমি। ধলাই শুধু এখন কালের সাক্ষী। ধলাই তীরবর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে প্রায় ৬৬.৭৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়ন দিয়ে এ উপজেলায় প্রবেশ করেছে ধলাই নদ। সীমান্তের ওপারে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশের ভেতরে মাত্র সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার। আঁকাবাঁকা ধলাই উপজেলার ইসলামপুর, মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, কমলগঞ্জ পৌরসভা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে জেলা সদরের মনু নদে মিলিত হয়েছে।
খরস্রোতা ধলাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় বাড়িঘর ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ধলাইয়ের ২২ স্থান চিহ্নিত করে চর অপসারণ করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিত খননের ফলে অপসৃত চর এলাকায় পুনরায় আগের চেয়েও বড় আকারে চর জেগে ওঠে।
সম্প্রতি এ নদের আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, পৌরসভা, রহিমপুর ইউনিয়ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক সময়ের ধলাই এখন বালুচর ও সরু খাল। সামান্য পানি থাকলেও নাব্য সংকটে থেমে গেছে প্রবাহ। বিশেষ করে ৫৭ কিলোমিটার এলাকায় ২০-২৫ স্থানে চর জেগেছে। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। নদের পানি কমে চর জাগায় সেচসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকও।
উপজেলার আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, ধলাই নদের ওপর নির্ভর করে আমাদের এলাকার কৃষক দীর্ঘদিন চাষাবাদ করে আসছে। কিন্তু নদ ভরাট হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় বোরো চাষাবাদ চরম হুমকির মুখে। তাই জেগে ওঠা চরগুলো দ্রুত খনন করার দাবি জানাচ্ছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপজেলা প্রশাসন সমন্বিত কাজ করে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বর্তমানে ধলাইয়ের চর অপসারণের কোনো সুযোগ নেই। তবে চর অপসারণ ও বাঁধ মেরামতের জন্য বড় একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন