সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামে জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ এক ইটভাটা। ভাটার আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায়নি শ্মশানঘাটও। এমনকি দখলে আছে কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিও। এ ছাড়া ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করে আসলেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানঘাট দখলে নিয়ে এটি পরিচালনা করায় মানুষের সেখানে দাহ করতে নানা জটিলতা পোহাতে হয়।
জেঠুয়ার মেসার্স মুন ব্রিকস্ নামে এই ইট ভাটার মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিপক্ষে কেউ কথা বললে নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার অসহায় মানুষ তার কাছে বিপদে শরণাপন্ন হলেই আর্থিক সহায়তার নামে তাদের জিম্মি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁষে ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার তিন পাশে কৃষিজমি ও এক পাশে একটি কপোতাক্ষ নদ। ইটভাটার মধ্যে রয়েছে শ্মশান ঘাট। যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে দাহ করা হয়। এ ছাড়া তিন থেকে চারশ মিটার দূরে রয়েছে জেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেটুয়া বাজারসহ জনবসতি এলাকা।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে ইটভাটাটি প্রথম শুরু করে ছিলেন গোনালী এলাকার মোকাম হোসেন। কিন্তু ভাটার মধ্যে শ্মশান ঘাট আছে, এজন্য এলাকাবাসী ইটভাটা স্থাপনে বাধা দেয়। পরে মেসার্স মুন ব্রিকস্-এর মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি মালিকানা নিয়ে ওই ভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। সেই থেকে ইট ভাটার কার্যক্রম চলেছে।
জেটুয়া গ্রামের বাসিন্দা মোল্লা তবিবুর রহমানসহ অনেকে জানান, ক্ষমতার জোরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধু ইটভাটাই চালু করেননি তারা, বেআইনিভাবে কৃষিজমির মাটি তুলে ও কপোতাক্ষ নদের চর কেটে ইট তৈরি করা হয়। ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষিজমি ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর চরম ক্ষতি হবে।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা বেগম বলেন, কোনো প্রকার নিয়ম না মেনে ইট ভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সেভাবে রিপোর্ট দিয়েছি।
তবে মেসার্স মুন ব্রিকস্ এর মালিক ইন্দ্রজিৎ দাশ বাপি বলেন, আমার ভাটার সকল কাগজপত্র আছে, নিয়ম-কানুন মেনেই আমি ইটভাটা পরিচালনা করছি।
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, জেঠুয়া মুন ব্রিকস্ নামে ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তারা চেয়েছিল, কিন্তু নিয়মের মধ্যে না আসায় তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বিষ্ণুপদ পাল বলেন, কৃষিজমি বা সরকারি জমি দখল করে ইটভাটা পরিচালনা করার কোনো নিয়ম নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ্য ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। জেঠুয়া মুন ব্রিকসের বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ওই আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। একই আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স না নিয়ে কোনো ইটভাটায় ইট তৈরি করা যাবে না। যদিও এসব ধারা লঙ্ঘন করে মেসার্স মুন ব্রিকস্ নামের ইটভাটাটি চালু করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন