চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রাম। গ্রামটি আশপাশে ‘সবজি গ্রাম’ বলে পরিচিতি পাচ্ছে। পিচঢালা রাস্তা ধরে গ্রামে ঢুকতেই দুপাশে চোখে পড়বে সবজিক্ষেত। সারি সারি কৃষি জমিতে নানা জাতের সবজিতে ভরে আছে পুরো গ্রাম। বিলজুড়ে, সড়কের ধারে, ঘরের আঙিনায়, নদীপাড়ে নানা জাতের সবজি তুলে রাখা আছে। যতদূর এগোবেন ততই যেন ক্ষেতের ফসল আরও সবুজ হচ্ছে বলে মনে হবে। এই গ্রামের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রবাস ফেরত যুবক, বয়োবৃদ্ধ সবাই যেন সবজি চাষি।
ইছামতী ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পলি উর্বর ভূমি হলো দক্ষিণ ঘাটচেক গ্রাম। এই গ্রামের ৩০০ একর ইছামতী ও দক্ষিণের চরজুড়ে আদিকাল থেকেই তিন ফসলি সবজি আবাদ হয়ে আসছে। গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দাদের মধ্যে অধিকাংশ পরিবারই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত।চাকরির পেছনে না ছুটে বাবা-দাদার পেশায় আত্মনিয়োগ করায় আধুনিক কৃষির ছোঁয়ায় বদলে গেছে এই গ্রামের আর্থসামাজিক চিত্র। কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামটি এখন বিষমুক্ত সবজি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ইছামতী, কর্ণফুলী নদী ও ইছাখালী খাল দ্বারা তিন দিক থেকে বেষ্টন করে রেখেছে গ্রামটিকে। এই গ্রামের ইছামতী ও দক্ষিণের চরে সবজি আবাদে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই গ্রামের শত শত কৃষক। যেখানে উৎপাদিত সবজি চলে যায় রাঙ্গুনিয়াসহ সারা দেশের বিভিন্ন বড় বাজারে। তিন ফসলি এই জমিতে সবজি আবাদ করে নিজেরা যেমন হয়েছেন স্বাবলম্বী অন্যদিকে শত শত শ্রমিকের কর্মের জোগান দিয়েছেন এই গ্রামের চাষিরা। গ্রামটি এখন সবুজ সবজি গ্রাম নামে খ্যাতি পেয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের কৃষকরা সবজিক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ চাষের জমি তৈরি করছেন, কেউ সার দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, কেউ-বা জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
কৃষকেরা মাঠের পর মাঠ ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, নানা জাতের শাক, মরিচ, শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কোনো কোনো মাঠে দেখা যায়, কৃষকরা সবজি তুলে বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন।
উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য কৃষকদের ভাবতে হয় না। এখানকার ফসলের সুনাম থাকায় ব্যবসায়ীদের সুনজর সব সময় থাকে। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে গাড়িবোঝাই করে সবজি কিনে নিয়ে যান বলে জানান কৃষকরা।
এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম। যিনি নিজেও একজন চাষি। করেছেন নানা ধরনের সবজি আবাদ। তিনি বলেন, 'আমার বাব-দাদার আমল থেকেই সবজি আবাদ করে আসছি। বিষমুক্ত সবজি আবাদ করে নিজে খেয়ে বাজারেও বিক্রি করি।'
গ্রামের অপর কৃষক মো. নাছের আলম। যিনি ২০০৬ সালে প্রবাসে ছিলেন। দেশে ফিরে এসে এই গ্রামের উর্বর কৃষি জমিতে নিজেই শুরু করেন কৃষি কাজ। বর্তমানে তারও নানা রকম সবজি ক্ষেত রয়েছে। যেখানে তার নিয়মিত ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। ইতিমধ্যেই ১৩ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করেন তিনি। এভাবে এই গ্রামের জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রবাস ফেরত যুবক, বয়োবৃদ্ধ সবাই সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এই গ্রামটি সবজি আবাদের জন্য বিখ্যাত। সব ধরনের সবজির আবাদ হয় গ্রামটিতে। যেখানকার উৎপাদিত সবজি চলে যায় স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে সারা দেশে।’
উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে কৃষি কর্মকর্তারা পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন