ফরিদপুর বাস টার্মিনাল থেকে লাগেজ বন্দি অবস্থায় লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দৌলতদিয়ার পতিতাপল্লীর এক যৌনকর্মী নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম।
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই লাশটি পাবনা জেলার নতুন গোহাইলবাড়ী গ্রামের মিলন প্রামাণিকের। তিনি রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যাতায়াতের সুবাদে রোজিনা আক্তার (৩০) নামে সেখানে এক পতিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে মিলনকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে রোজিনা।
রোজিনা বলেন, ‘মা তুলে বাজে ভাষায় গালি দেওয়ায় রাগের মাথায় আমি একাই তারে মারছি। তার কাছে টাকা পাইতাম। সেই টাকা ছাড়ানোর জন্য ঝগড়া হয়।’
এর আগে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর পৌর বাস টার্মিনালে ফেলে যাওয়া একটি লাগেজ থেকে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরে সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনার পরিচয় শনাক্ত করা হয় এবং ঢাকার কদমতলী জুরাইনের দেওয়ান বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর পর কোতোয়ালি থানার এসআই শামীম হাসানের নেতৃত্বে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার থেকে মাহেন্দ্র গাড়ি শনাক্ত করে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়।
তার দেওয়া তথ্যমতে, লাগেজ বহনকারী রিকশাচালককে আটক করার পর পাওয়া যায় রোজিনার সন্ধান। তবে দৌলতদিয়ার পতিতাপল্লীর জনৈক রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রোজিনার ঘরে অভিযান চালিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে জুরাইনের দেওয়ান বাড়ির ষষ্ঠ তলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যে কারণে যেভাবে হত্যাকাণ্ড:
রোজিনাকে গ্রেপ্তারের পর সে পুলিশকে জানায়, নিহত মিলন তার ঘরে যেত মাঝেমধ্যেই। ঘটনার আগেরদিন মিলন তার ঘরে আসে। রাত ২টার দিকে তাদের মাঝে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে রোজিনার মা তুলে গালি দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে রোজিনা তার পরিহিত ওড়না গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে খাট থেকে নামিয়ে লাশটি কম্বল, বড় বেডশিট ও বালিশের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় একটি লাগেজের মধ্যে রাখে।
পরে লাশ গুম করতে প্রথমে ৬শ' টাকা ভাড়ায় একটি রিকশায় করে মাহেন্দ্র স্ট্যান্ডে নেয়। সেখান থেকে ৬শ' টাকা ভাড়ায় মাহেন্দ্রতে উঠিয়ে দৌলতদিয়া থেকে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসে। সেখান ঢাকাগামী বিকাশ পরিবহনের একটি টিকেট কেটে লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বাক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে পালিয়ে যায়। তবে গাড়ি ছাড়ার নির্ধারিত মুহূর্তে মালিক না পেয়ে গাড়ির লোকেরা লাগেজটি বাস টার্মিনালে রেখে যায়।
যেভাবে পতিতাপল্লীতে রোজিনা:
রোজিনার ভাষ্য অনুযায়ী, সে প্রায় একযুগ গোয়ালন্দঘাটের দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে রয়েছে। ১৪ বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয়। তবে বিয়ের কিছুদিন পর তাদের তালাক হয়ে যায়। তারপর দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চা দোকানদার হাকিমের সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর সে সুজন নামে আরেকজনকে বিয়ে করে। এভাবেই দৌলতদিয়া পল্লীতে চলছিল তার জীবন। অন্যদিকে, পাবনার মিলন প্রামাণিক ইট ভাটায় কাজের সুবাদে রাজবাড়ী থাকত। মাঝে মাঝে যৌন পল্লীতে যেত। সেখানে রোজিনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
মন্তব্য করুন