দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তর থেকে বয়ে আসা হিম বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ী উপজলার জনজীবন। কয়েক দিনের হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জবুথবু এ অঞ্চলের সবাই। কনকনে শীতের কারণে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।
আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। সকাল ৬টায় ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পর দিন পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে পথঘাট। সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহগুলো চলাচল করতে দেখা যায়। এদিকে প্রচণ্ড শীতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর, খেতমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ।
উপজেলার পৌর এলাকার চকচকা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ফজিলা খাতুন (৪২) বলেন, স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে গরু ও ছাগল লালন-পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখন তার দুইটি গরু ও তিনটি ছাগল রয়েছে। কিন্তু শীতের কারণে অসুখ-বিসুখ হওয়ার ভয়ে গরু ও ছাগলকে ঘরের বাইরে বের করা যাচ্ছে না। ঠান্ডা থেকে গবাদিপশুগুলো রক্ষার সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। কাচা ঘাসের জোগান কমা এবং পশু চরাতে না পেরে দানাদার খাদ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কাঁটাবাড়ী রায়পাড়া এলাকার দিল্লু চন্দ্র রায় বলেন, গবাদিপশুকে নিয়ে ঠান্ডার মধ্যে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। এদিকে ঘরের মধ্যে রেখে খাদ্য কিনে খাওয়ানোর পাশাপাশি শীত থেকে রক্ষার জন্য বস্তা দিয়ে ঢেকে দিলেও পরদিন সেটি মাটিতে পড়ে ভিজে যাচ্ছে। এতে করে বস্তাও পশুগুলোকে দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শীতের জন্য পশুগুলোও কাহিল হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় দিনাজপুরে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। বাতাসের গতি ছিল ৪ নটস। সকাল ৯ টায় বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ এবং বাতাসের গতি ২ নটস রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. রবিউল ইসলাম বলেন, শীত থেকে গবাদিপশুদের কীভাবে পরিচর্যা করাসহ নিরাপদে রাখা যাবে সে বিষয়ে খামারী ও গবাদিপশুর মালিকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে খোঁজ রাখা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান শীতের কারণে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিদিনই কম্বলের জন্য অফিসে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কয়েক দফায় বরাদ্দ পাওয়া ৪ হাজার ৭৬৪টি কম্বল ইতিমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বলের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ না আসায় নতুন করে কাউকেই কোনো কম্বল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মন্তব্য করুন