রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসরের ষষ্ঠ দিনে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। এতে করে যেমন খুশি ব্যবসায়ীরা তেমনি খুশি দর্শনার্থী ও ক্রেতারাও।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে জমে ওঠে এ মেলা। গত আসরের চেয়ে এবারের আসর আরও বেশি জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজিয়েছে ইপিবি কর্তৃপক্ষ। এর আগে, গত ২১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা উদ্বোধনের সময় দর্শনার্থীর সংখ্যা তেমন বেশি সংখ্যক না থাকলেও ৬ষ্ঠ দিনে দর্শনার্থী ও ক্রেতার সমাগম ছিল বেশ ভালো।
তবে, এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। যানজট পুরোপুরি নিরসন করতে না পারলে জনসমাগম কম হবে লোকসানের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। আর এজন্য প্রশাসনের প্রতি ব্যবসায়ীদের আহ্বান যাতে যানজট মুক্ত রাখা হয় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কটি। যানজট নিরসন করতে পুলিশ প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরেই দেশে শৈতপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ষষ্ঠ দিনে শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটায় অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে তাদের মাঝে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের বিক্রিও বেড়ে গেছে অনেকাংশে। তবে মেলায় দর্শনার্থী বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে যাতায়াতের ভোগান্তি। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে প্রায় ১২ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। যানজট পেরিয়েও দর্শনার্থীরা আসছে মেলায়।
ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরে মোট ৩৩১টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ বছর দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৩৩০টি। যার মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন রয়েছে মোট ১৮টি। এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংক, তুর্কিসহ অন্তত ১২টি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এ আসরে বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। এ আসরে মেলার আয়তনও বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় প্রবেশ ফি ৫০ টাকা শিশু বাচ্চাদের জন্য ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেলার প্রতিটি অংশে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার ৬ষ্ঠ দিনে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ও ক্রেতা আসতে থাকে। মেলার স্টলগুলোতে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বাতির রঙ্গিন আভায় জাঁকজমক পরিবেশ বিরাজ করছে। স্টলগুলো সাজ-সজ্জার মাধ্যমে ক্রেতাদের আকর্ষিত করতে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন পন্থা। মেলায় স্টলগুলোর কর্মচারীরা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য সম্পর্কে জানিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এতে করে মেলায় যেন পূর্ণতা পেয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীদের মাঝে সবচেয়ে ভিড় লক্ষ করা গেছে শীতের কাপড়, গৃহস্থালীর পণ্য ও ইলেকট্রনিক্স আইটেমগুলোর দোকানে। এ ছাড়া মেলায় প্রথমবার শিশুপার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুপার্কটিতে ফ্লিপার, ওয়াটারবকল, নাগরদোলা, নৌকা, ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে। যেখানে অভিভাবকরা শিশুপার্কে নিজেদের সন্তানদের বিভিন্ন রাইডে উঠিয়ে আনন্দ দিচ্ছে। তবে শিশুপার্কের রাইডের টিকিটের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি অভিযোগ করেন দর্শনার্থীরা। কথা হয় গৃহস্থালী পণ্যের ব্যবসায়ী জাকিরের সঙ্গে তিনি বলেন, অবশেষে ৫ দিন পর বাণিজ্য মেলা জমে উঠল। আজ সকাল থেকেই বাণিজ্য মেলায় দর্শনাথীরা ভিড় করতে শুরু করেছে। মেলায় দর্শনার্থী হওয়ায় আমাদের বিক্রি বেড়েছে অনেক। এ কারণে আমরা অনেক বেশি খুশি।
ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী সুমন বলেন, আমরা গত ৫ দিনে কোনো ফার্নিচার বিক্রি করতে পারি না। আমরা ছুটির দিনের অপেক্ষা ছিলাম এতদিন। অবশেষে আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। জমতে শুরু করেছে বাণিজ্য মেলা। সকাল থেকে টেবিল, চেয়ার, খাটসহ বেশ কয়েকটি ফার্নিচার বিক্রি করেছি।
কথা হয় ব্যবসায়ী খালেকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতের কারণে ও দোকান নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এতদিন দর্শনার্থীরা আসছিল না কিন্তু আজকে প্রেক্ষাপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। মেলায় আজ দর্শনার্থীরা যেভাবে আসতে শুরু করেছে এতে আমরা অনেক খুশি।
নরসিংদীর মাদবদী থেকে মেলায় আশা দর্শনার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মেলায় আসার দীর্ঘদিনের শখ আমার। মেলায় আসতে গিয়ে বাইপাস সড়কে যানজটে পড়ে ১০ মিনিটের রাস্তা দুই ঘণ্টা লেগেছে। বাড়ি ফেরার পথে কতক্ষণ রাস্তায় বসে থাকতে হয় আমার জানা নেই। মেলায় আসতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাইপাস সড়কে যানজট। যানজট মুক্ত রাখতে মেলা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ভালো থাকা উচিত।
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী আকলিমা আক্তার বলেন, মেলায় ক্রেতা সমাগম ঘটায় অনেক ভালো লাগছে। মেলা থেকে কাপড় জাতীয় কিছু পণ্য ক্রয় করলাম। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে।
মন্তব্য করুন