ফরিদপুরের চরাঞ্চলের চাষিরা প্রথাগত এক ফসলের চাষে নির্ভর করছেন না।আধুনিক কৃষির সঙ্গে তাদের যত পরিচয় ঘটছে ততই চাষাবাদে কৌশলি হচ্ছেন তারা। বর্তমানে একই সময় একাধিক ফসল চাষ করে সফল হয়েছেন এখানকার অনেক চাষি। নিজেরাই হিসেবে-নিকেশ করে ফসলের মাঠ সাজাচ্ছেন। এতে সারা বছরই সবুজ থাকছে চরাঞ্চল।
সরেজমিনে উপজেলার দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত চর হরিরামপুরের বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ চরজুড়ে করা হয়েছে ভুট্টার আবাদ। সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলি মাঠ। বিভিন্ন জাতের ভুট্টা আবাদ করেছেন কৃষকরা। পাশেই কুমড়ার ক্ষেত। সেখানে আবার রোপণ করা আছে কলাগাছ। ধীরে ধীরে তাও বড় হচ্ছে। আবার কুমড়াসহ অন্য ফসলও উৎপাদন হচ্ছে। একে আধুনিক কৃষির ভাষায় বলা হয় ‘মিশ্র চাষ’।
চরভদ্রাসন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানায়, লাভজনক ফসল ভুট্টা আবাদে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। ফলে চরভদ্রাসনে এ বছর ৫২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চরভদ্রাসনে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল ১৪১০ হেক্টর। ২০২৩-২৪ অর্থবছর অর্থাৎ এ বছর উপজেলায় ভুট্টার আবাদ বেড়ে হয়েছে ১৯৩৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে শুধু চর হরিরামপুরেই রয়েছে ১১২৫ হেক্টর।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা গত তিন চার বছর ধরে ওই বিরান চরে গতানুগতিক ফসলের চাষাবাদ ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতি ও কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে পুরো চরকে শস্য ভান্ডারে পরিণত করেছেন। যেহেতু ভুট্টার দাম পাওয়া যায় ধানের দ্বিগুণ, তাই ভুট্টা চাষ করছেন বেশির ভাগ চাষি। এ ছাড়া সরিষা, কলা, গম, শীতকালীন পেঁয়াজ, বাদাম ও ডাল ফসল চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন পদ্মা চরের কৃষকেরা।
স্থানীয় পশ্চিম চর শালিপুর বাসিন্দা পিন্টু খান বলেন, তিনি গত বছর ৭ একর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলেন। এ বছর ১০ একর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। এছাড়াও তিনি আরও ৫ একর জমিতে কলা গাছের চারার সঙ্গে কুমড়ার আবাদ করে সফল হয়েছেন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৭ কেজি ওজনের শতাধিক কুমড়া তুলছেন ক্ষেত থেকে।
ওই চরের কৃষক আবু মোহাম্মাদ, আব্দুর রহমান, রুবেল খান, মোকা ব্যাপারী ও জালাল শেখের গল্পও একই রকম। ব্যতিক্রমী ও লাভজনক ফসলের আবাদ করে সফল তারা। অথচ পাঁচ বছর আগেও কৃষিকাজ করে সন্তুষ্ট ছিলেন না তারা।
কৃষকরা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় ওই চরে গিয়ে উঠান বৈঠক ও কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ ছাড়া প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়েছেন তাদের অনেকেই।
চর হরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির ব্যাপারী বলেন, গত বছরের তুলনায় চরের কৃষকেরা এ বছর ভুট্টার আবাদের দিকে ঝুঁকেছে বেশি। ফলে চরের সব অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় এসেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ বছরে উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৫৫০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকার বীজ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ভুট্টা বীজ রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি মৌসুম শেষে বপন যোগ্য ভুট্টার বীজও বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি মোর্শেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনাবাদি জায়গাসহ কৃষকদের ফেলে রাখা জায়গা আবাদের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন