নওগাঁয় ঘড়ির কাটায় তখন বেলা ১১টা পার হতে চলল। কিন্তু বাইরে বের হলে ভোর ৫টা বাজে বলে যে কারও ভ্রম হতে পারে। কারণ, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে পরিস্থিতি ভোরের মতোই রয়েছে। সূর্যের দেখা মেলার কোনো আশাও উঁকি দিচ্ছে না। তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।
প্রায় গত তিন সপ্তাহ থেকে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জবুথবু এ অঞ্চলের জনজীবন। এখানে কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করছে ৮ থেকে ১১ ডিগ্রির ঘরে। এবার উত্তরের জেলা নওগাঁয় ৭-এর ঘরে নেমেছে তাপমাত্রা। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় বদলগাছী জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা এটিই চলতি শীত মৌসুমে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক বিষয়টি মুঠোফোনে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
হামিদুল হক বলেন, শীত যাচ্ছে না। আরও কয়েক দিন এ রকম থাকবে। বর্তমানে নওগাঁর ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। এ ছাড়া ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা আরও নিচের দিকে নেমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে শীতের প্রকোপ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে আকাশ মেঘলা, কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। জনজীবন জবুথবু হয়ে পড়েছে। নেমে এসেছে তীব্র শীতের ভয়। আর খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছে বেকায়দায়। নওগাঁর সাধারণ মানুষ শীতের কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। আর যারা জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন তারা পড়েছেন চরম বেকায়দায়।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে পথঘাট। ১০ হাত পরের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সড়কগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহ চলাচল করছে। শহরে লোক ও যানবাহন চলাচল অনেক কম। মাঠে কৃষিকাজ প্রায় হচ্ছেই না। শীতার্ত ও ছিন্নমূল মানুষেরা কনকনে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য অনেকেই বাড়ির আঙিনা ও ফুটপাতসহ চায়ের দোকানের চুলার ধারে বসে তাপ পোহাচ্ছেন।
অন্যদিকে দিন দিন শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার মতো ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ।
মন্তব্য করুন