দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (বরগুনা সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাচঁবারের সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ভোটযুদ্ধে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে তৃতীয় হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের এখানে নৌকার এমন পরাজয়ের নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি, তুলনামূলকভাবে এলাকার উন্নয়ন না করা, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল, কিশোর গ্যাং, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ণ, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়া, সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অবাঞ্ছিত করা ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মকে কারণ হিসেবে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তবে নৌকার বিরুদ্ধে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বরগুনায় নৌকা পরাজিত হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শম্ভু।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা পাঁচবারের এমপি শম্ভু সাতবার দলীয় মনোনায়ন নিয়ে ২০০১ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ মোট দুবার হেরেছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছেই।
নাম না প্রকাশের শর্তে বরগুনা জেলার আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানান, ত্যাগী নেতাদের যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করে অন্য দল থেকে আসা নিজের পছন্দের লোকদের সাংগঠনিক পদ দিয়ে তাদের আওয়ামী লীগের নেতা তৈরি করেছেন শম্ভু। ওইসব হাইব্রিড নেতাদের অত্যাচার ও সীমাহীন লুটপাটের প্রভাব পড়েছে এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওইসব নেতাদের মাধ্যামে ভয়ভীতি দেখানোর কারণেই ভোটারদের উপস্থিতি কম হওয়া এবং উপস্থিত ভোটারগণ পুনরায় অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে জনগণ।
বরগুনা-১ আসনে নৌকার মাঝি পরিবর্তনেই তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছে তারা। এ ছাড়াও শম্ভুর স্ত্রী মাধবী দেবনাথকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভায়রা সিদ্দিকুর রহমানকে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ছেলে সুনাম দেবনাথকে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদ দিয়ে নেতা তৈরি করে বরগুনায় আওয়ামী লীগকে পরিবারতন্ত্রে পরিণত করেছেন। ফলে দলীয় নেতাকর্মীদের মনের চাপা ক্ষোভ ও সম্মেলনের ১ বছরেও জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেওয়ায় নেতাকর্মীদের বিভক্তিকেও নৌকা প্রতীকের পরাজয়ের কারণ হিসেবে মনে করছেন তারা।
এ ছাড়াও একটানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য থেকেও বরগুনা-১ আসনে তুলনামূলক উন্নয়ন না করায় শম্ভুর ওপর থেকে মুখ ফিয়ে নিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।
নেতাকর্মীরা আরও বলেন, গত বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে ঘোষিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে শম্ভুর পছন্দসই লোক সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান না পাওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় জেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ একাংশ নেতাকর্মীরা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেনি। জেলা তাঁতি লীগের কমিটি বিলুপ্ত করে অরাজনৈতিক লোকদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের কিছু আগে উপজেলা তাঁতি লীগের কমিটি বাতিল করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নেতাকর্মীদের নিস্ক্রিয় করা হয়েছে। এ ছাড়াও সম্মেলনের মাধ্যমে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগে গোলাম সরোয়ার ফোরকানকে সভাপতি মনোনীত করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিএনপি থেকে আসা শম্ভুর অনুসারী মতিয়ার রহমান মতিকে সভাপতি ঘোষণা করে ফোরকানকে বাদ দেওয়ার ক্ষোভে ফোরকান স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করেছেন।
এ ছাড়াও দুর্নীতি, কিশোর গ্যাং লালন পালন, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়ায় নৌকার পরাজয়ের কারণ হিসেবে মনে করছেন তারা।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও তরুণ রাজনীতিবিদ এস এম মশিউর রহমান শিহাব বলেন, বরগুনা-১ আসনের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের। সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্র, দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণেই বরগুনায় নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।
মুঠোফোনে কথা হলে কালবেলাকে শম্ভু বলেন, বরগুনা-১ আসনে দলীয় তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নৌকা পরাজিত হয়েছে। মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে তারপরেও পরাজিত হয়েছি, আমরা কারণগুলো দেখতেছি।
মন্তব্য করুন