বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ২০ হাজার কৃষক চলতি শীত মৌসুমে প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে। এতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ২৯২ টন। জমিগুলো থেকে প্রায় ৩০কোটি টাকার টমেটো উৎপাদনের আশা করছে কৃষক।
গত বছরের চেয়ে এ বছরে টমেটো বেশি উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন হলে তীব্র শীতের কারণ টমেটো গাছে রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এ হাটে আমদানি বেশি হলেও যোগাযোগ ভালো থাকায় বিভিন্ন শহর থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি টমেটো কিনে নিয়ে যাওয়ায় কোনো চিন্তা নেই চাষিদের। গত দিয়েছে পাতা কুঁকড়ানো সমস্যা। যার ফলে টমেটোর আকৃতি অনেকটাই ছোট হয়েছে।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধুনট উপজেলার টমেটো চাষিরা ব্যস্ত সময় কাটছে জমি থেকে টমেটো তুলতে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ জমির টমেটো তোলা শেষ হয়েছে। পাঁচথুপী বাজারে প্রতিবারের ন্যায় এবারও টমেটোর আমদানি গত বছরের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বাজারে পাইকারি দরে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮ শত থেকে ২ হাজার টাকা মণ। যা খুচরা হিসেবে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গড়ে ৫০ টাকা কেজি হিসেবে ধরলেও সাড়ে ৬ হাজার ২৯২ টন টমেটো দাম পড়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। পাঁচথুপি হাটে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়িরা টমেটো কিনে পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের কাছে।
উপজেলার পাঁচথুপী, পিরহাটি, শ্যামগাঁতী, কালেরপাড়া, গুয়াডহরী, অলোয়া, গোপালনগর খাদুলী, নিমগাছি গ্রামসহ পুরো উপজেলায় টমেটো চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
উপজেলার শ্যামগাঁতী গ্রামের কৃষক আবু তাহের জানান, টমেটো চাষের জন্য প্রয়োজন অনুকূল আবহাওয়ার। এবার সেটি শুরু থেকে ভালোই ছিল কিন্তু শেষের দিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে বিষ মুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশ ভালো উৎপাদন হয়েছে। শীতের কারণে গাছ মরে যাওয়ার হাত থেকে পলি দিয়ে ঢেকে গাছ রক্ষার চেষ্টা করছি। তবে এ বছরে টমেটোর আবাদ ভালো হয়েছে। আশাতীত ফলন হয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাজারের চাহিদার চেয়ে বেশি টমেটোর আমদানি ঘটছে। তাই টমেটোর দাম প্রতিনিয়ত কমতে শুরু করেছে।
নজরুল ইসলাম মোল্লা নামের এক প্রান্তিক চাষি জানান, জমিতে টমেটোর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বৃষ্টির কারনে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খুব একটা বড় আকৃতি হয়নি। পাইকারি বাজার মুল্যে অনেকটা সন্তষ্ট বলেও জানান ওই চাষি। পাইকারি ব্যবসায়ী নুরুল হুদা জানান, গত বছরের মতো এইবারও একই বাজার মূল্যে টমেটো ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো থাকায় টমেটো সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রি করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। তবে পঁচনশীল সবজি হওয়ায় অনেকটা কাঁচা পাকা টমেটো সংগ্রহে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা।
ওমর ফারুক নামে এক ক্রেতা জানান, টমেটো উঠানোর উপযুক্ত সময় হলে জমিতে ফেলে রাখা সম্ভব নয়। আবার ঘরে মজুদ করে রাখাও অসম্ভব। তাই টমেটো পঁচে যাওয়ার ভয়ে বিক্রি করা ছাড়া টমেটো চাষির কোনো উপায় থাকে না। তাই সব সময় টমেটোসহ অন্য সবজি ভালো দাম পেতে হলে স্থানীয়ভাবে সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার বলেন, সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে এখানকার কৃষকরা আগাম জাতের শীতকালীন টমেটো চাষে লাভের মুখ দেখছেন। এ ছাড়া টমেটো ক্ষেতে যাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করেই ফলন বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়েও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
মন্তব্য করুন