ভোর হতেই অস্থায়ী খোলা মাঠে চৌকি পেতে ডালায় ডালায় ইলিশসহ নানা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন মাছ বিক্রেতারা। তার পাশেই বসে সবজি, খেলনা আর নানা রকমের বাহারী খাবারের দোকান। এদিন মেলায় আসা সবাই জোড়া ইলিশ আর বেগুন নিয়ে ঘরে ফেরেন।
কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টার মধ্যেই ক্রেতা বিক্রেতার হাঁকডাকে জমে উঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।
শরীয়তপুরের মনোহর বাজার ও তার আশপাশের এলাকার ঐতিহ্য এটি। প্রতি বছরের মাঘ মাসের প্রথম দিনটিতে মনোহর বাজার কালিমন্দির ও গরুর মাঠে বসে এই ঐতিহ্যবাহী পৌষে সংক্রান্ত জোড়া ইলিশ মাছের মেলা।
মেলাটি কত বছর আগে শুরু হয়েছে তা অনেকেই জানেন না। তবে ধারণা করা হয়, অন্তত ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলা। ইলিশ ছাড়াও বিভিন্ন খাবারের দোকান, খেলনার দোকানও আছে মেলায়। বছরজুড়ে এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন এখানকার সাধারণ মানুষ।
এখানকার স্থানীয় হিন্দুধর্মের মানুষের পাশাপাশি মুসলিমরাও আসেন মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে। মেলাটি ঘিরে আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের সমাগম ঘটে। মেলা উপলক্ষে এখানকার মানুষেরা তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। এ মেলাকে ঘিরে বড়দের চাইতে ছোটদের আগ্রহ থাকে আরও বেশি। তারা সবাই বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে মেলায় গিয়ে মিষ্টি খাবার পাশাপাশি রং-বেরঙের বেলুন আর খেলনা কেনে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাছের মধ্যে রয়েছে মেলায় ইলিশ, রুই, কাতল, বোয়াল, আইড় ও কার্প। এছাড়াও মেলায় মাছের পাশাপাশি সবজি, মিষ্টি, খেলনা নিয়ে বসেছেন অন্যান্য দোকানি। ক্রেতারা দামদর করে মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। ছোট ছোট শিশুরা খেলনার দোকানে ভিড় জমাচ্ছে।
প্রতিবছর মেলায় হিন্দু আর মুসলমান নয়, সবাই এ মেলায় হাজির হয়ে মাছের পাশাপাশি এক জোড়া বেগুন কিনে নেন।
মেলায় ঘুরতে আসা নারায়ণ চন্দ্র কালবেলাকে বলেন, এ মেলাটি অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। আমি এবং আমার পরিবার প্রতিবছর আসি এবং কেনাকাটা করি।
আরেক দর্শনার্থী আরিফ বলেন, এ মেলাটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। অনেকবার এসেছি আজও আসলাম। এসে ভালোই লাগল।
মনোহর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মোল্লা কালবেলাকে বলেন, আমাদের অঞ্চলের দুইশ বছরের ঐতিহ্য এ জোড় মাছের মেলা। প্রতিবছর এ দিনে মনোহর বাজার মাঠে ভোরবেলা থেকেই ইলিশ মাছ বিক্রি করা হয়। হিন্দু-মুসলিম সবাই মেলায় এসে মাছ কিনেন। এখানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মন্তব্য করুন