মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা মরিয়ম ফেরদৌস মনি নামে এক কলেজছাত্রীর পরিবারকে প্রায় তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ওই ছাত্রীর বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় বাঁশের বেড়া ও গাছের চারা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাবিজুরীপার গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলা উদ্দিনের মেয়ে। তিনি বড়লেখা নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের অনার্সের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। আজ তার অনার্স প্রথমবর্ষের লোকপ্রশাসন ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা ছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে অবরুদ্ধের ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ ফাঁড়িতে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বড়লেখা থানার ওসিকে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনির বাবা-মা ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটাউচি মৌজায় ডিপি খনিয়ান ২৪৬ এর সাবেক ১৭৭৪ নং দাগের সোয়া ১০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। প্রায় ১২ বছর ধরে বসতবাড়ির দক্ষিণ দিকের অর্ধশত বছরের পুরোনো রাস্তা দিয়ে কলেজছাত্রীর পরিবারসহ আশপাশের লোকজন চলাচল করছিল। রাস্তাটিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী ও ইউপি সদস্য সরকারি প্রকল্পে উন্নয়ন কাজও করেছেন। কিন্তু হঠাৎ গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশী জাকির হোসেন, নাজিম উদ্দিন, ফখর উদ্দিন ওরফে কটন আলী, আব্দুস শহিদ, আজাদ আহমদ গংরা কলেজছাত্রীর পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি গাছের চারা রোপন ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। ফলে বসতবাড়ির দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় পরিবারটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এমনকি গাছের চারা ও বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়েও চলাচল করতে দেওয়া হয় না।
এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদের শরণাপন্ন হলে তিনিও কোনো সুরাহা করে দেননি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর শাহবাজপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। অবশেষে ভোক্তভোগী কলেজছাত্রী গত ৩১ অক্টোবর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাস্তা বন্ধকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মরিয়ম ফেরদৌস মনি বলেন, রাস্তায় গাছের চারা রোপণ ও বেড়া দেওয়ার কাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই অনেকের কাছে যাই। লিখিত অভিযোগ দেই। সবাই সময়ক্ষেপণ করেন। অপরদিকে প্রতিপক্ষরা রাস্তা বন্ধের কাজ আরও পাকাপোক্ত করে। কিছু চারা মরে যাওয়ায় এগুলোর ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন তারা কাঁটা ফেলে তাও বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কোনোরকম বের হয়ে ইতিপূর্বে দুটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারলেও তাদের বাধায় আজকের নির্ধারিত পরীক্ষায় যেতে পারিনি। বাদীপক্ষের আইনজীবী সুব্রত কুমার দত্ত বলেন, বিজ্ঞ আদালত রাস্তার প্রতিবন্ধকতা অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রতিবেদন জমা দিতে থানার ওসিকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
শাহবাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ ইন্সপেক্টর নবগোপাল জানান, আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় যাওয়ার সময় ছাত্রীকে যেতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু প্রতিপক্ষরা আমার কথাও শুনেনি।
উল্লেখ্য, ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজনে পক্ষরা আলোচনা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় বাজারমূল্যে ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ন্যূনতম চলাচলের পথ দিতে হবে। কোনো পক্ষ রাজি না হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মন্তব্য করুন