সিলেটের তারাপুর চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বকেয়া মজুরি প্রদানসহ ৭ দফা দাবিতে গত শনিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে এ কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা।
এদিকে চা বাগান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে শুকনো মৌসুমের কলম বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন চা শ্রমিকরা। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বৈঠকে বসা হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত হননি তারাপুর বাগানের চা শ্রমিক আন্দোলন ও পঞ্চায়েত নেতারা।
জানা গেছে, সিলেটের তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকদের দুই সপ্তাহ ধরে মজুরি বকেয়া পড়েছে। এ অবস্থায় কাজ বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। দুই সপ্তাহের মজুরিসহ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বকেয়া এরিয়ার বিলের তৃতীয় দফার টাকাসহ সাত দফা দাবিতে শ্রমিকরা শনিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন।
শ্রমিকদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, দুই সপ্তাহের মজুরি প্রদান, এরিয়ার বিলের তৃতীয় দফার টাকা প্রদান, অবসরের টাকা প্রদান, প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ভবিষ্য তহবিল) টাকা জমা দেওয়া, ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়া, পানির সমস্যা সমাধান ও বাগানে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা।
বাগানের শ্রমিকরা জানান, দুই সপ্তাহ বেতন বন্ধ থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেকের বাড়িতে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বেতন না পাওয়ায় পৌষসংক্রান্তিও পালন করতে পারেননি তারা।
তারাপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুনীল মোদির মেয়ে সোমা মোদি বলেন, বারবার আমাদের মজুরি বন্ধ করেন বাগান মালিকরা। তাই এবার আমরা কঠোর আন্দোলনের পথে যাচ্ছি। আজ (মঙ্গলবার) আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিলও করা হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে সোমবারের বৈঠকে তারা কেনো যাননি- এ বিষয়ে সোমা মোদি কিছু বলতে পারেননি।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা এ বিষয়ে বলেন, সমন্বয় করে সোমবার সন্ধ্যায় বাগানের মালিকপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের নিয়ে বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। মালিকপক্ষ আসলেও আন্দোলনকারীরা আসেননি। ওই বৈঠকে ডেপুটি ডাইরেক্টরও (লেবার) উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আমরা বৈঠকে বসেও ফোনে বারবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তারা আসেননি। ফলে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। আবারও আমরা তাদের নিয়ে বসার চেষ্টা করব। সমস্যা হলে এর সমাধানও আছে। কিন্তু বৈঠকে না বসলে তো আর সমাধান আসবে না।
তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী বলেন, নিশ্চয়ই কেউ তাদের উসকানি দিচ্ছে। তা নাহলে সমাধানের জন্য তাদের ডাকলেও তারা আসবে না কেনো। আর ডেপুটি ডাইরেক্টরের (লেবার) উপস্থিতিতে তারা না এসে অবজ্ঞা করা চা শ্রমিক আইনে অপরাধ। মালিকপক্ষ তো সমাধানের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তাহলে আন্দোলনকারীরা বৈঠকে আসবেন না কেনো। এর দ্বারা স্পষ্ট- তাদের কেউ উসকানি দিচ্ছে। যাতে বাগানের ক্ষতি হয়, সর্বোপরি সিলেটের অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
মন্তব্য করুন