টানা পঞ্চম দিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি দিনাজপুরে। প্রচণ্ড শীতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের কারণে বোরো বীজতলা কুঁকড়ে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন কৃষক। জরুরিভাবে ২০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯৬% এবং বাতাসের গতি শূন্য নটস রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ।
উত্তরের হিম বাতাস আর টানা ছয় দিন ধরে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় জনজীবনে দেখা দিয়েছে জবুথবু অবস্থা। প্রচণ্ড শীতের কারণে বোরো বীজতলা, আলু নিয়ে বিপাকেও পড়েছে কৃষক। পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বোরোবীজ তলা।
দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ কাজে বের হতে পারছে না। যারা বের হচ্ছেন তারা কাজ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
দিনাজপুরে তাপমাত্রা গত ৯ জানুয়ারি- ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ জানুয়ারি- ১১.৭ ডিগ্রি, ১১ জানুয়ারি- ১১ ডিগ্রি ও ১২ জানুয়ারি- ১০ ডিগ্রি, ১৩ জানুয়ারি ৮.৮ ডিগ্রি এবং ১৪ জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আগামী কয়েকদিনে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে বলে জানায় দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
সোমবার সকালে মানুষ বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিত ষষ্টীতলার মােড়ে গিয়ে দেখা যায় শ্রমিকের খুব একটা ভিড় নেই। শীতের কারণে মানুষ কাজে আসতে পারেনি। যে কয়েকজন মানুষ এসেছে তাদের ছবি তুলতে গিয়ে তারা কম্বলের জন্য ছুটে আসে। স্থানীয় নিজাম উদ্দিন জানান, এখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার শ্রমিকের সমাগম ঘটে। কিন্তু গত ৫ দিন ধরে শীতের কারণে শ্রমিকরা আসতে পারছে না। আজকে এতো বেশি শীত যে ১০০ জন শ্রমিকও আসতে পারেনি। কাজও নেই।
বিরল উপজেলার জিজোড়া এলাকার শফিকুল ও ওয়াউয়াল নামে দুই কৃষক জানান, শীতের কারণে বোরো বীজতলা কুঁকড়ে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই শীত ও কুয়াশা থেকে বোরো বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। যাতে শীত ও কুয়াশা বীজতলায় পড়তে না পারে।
সদর উপজেলার শংকরপুর গ্রামের কৃষক আবেদ আলী বলেন, তিন বিঘা মাটিতে আলু চাষ করেছেন। শীত ও কুয়াশার কারণে আলুর গাছে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। তাই প্রতিদিন মিটামিন স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে করে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর রেলস্টেশনে ছিন্নমূল মানুষদের দেখা যায় শীতের কারণে তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন। বালুবাড়ি মহল্লায় রইস উদ্দিনের বাড়ির সামনে দেখা মেলে পাঁচটি কুকুর শাবকের। যাদের বয়স দুই মাস। মা কুকুরটি অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা গিয়েছে। স্থানীয় মানব শিশুরা আগুন জ্বালিয়ে কুকুর শাবকদের উষ্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
মন্তব্য করুন