বরিশাল বিভাগের মানুষকে কাবু করে ফেলেছে এবারের হার কাঁপানো শীত। বিভাগে গত তিন দিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। শেষ বিকেলে এক চিলতে রোদ উঠলেও তা ছিল উত্তাপহীন। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত রোগীর লম্বা লাইন। ইতোমধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে বরিশাল বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৩৯৩ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঠান্ডাজনিত রোগে বিভাগের ৬টি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮৭ জন। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৯ জন এবং ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন। ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ভোলায় ৫১, পটুয়াখালীতে ৪১, বরগুনায় ৪০, বরিশালে ৩২, পিরোজপুরে ২২ ও ঝালকাঠিতে ১১ জন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টেও সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালীতে ৩১ জন, ভোলায় ২১, বরিশালে ১৬, পিরোজপুরে ৮ ও ঝালকাঠিতে তিনজন। ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পটুয়াখালীতে ৮১ জন। ঝালকাঠিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন আর বরিশালে আক্রান্ত হয়েছেন আটজন। গত ১ মাসে এই বিভাগে শীতকালীন রোগের প্রাদুর্ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৩৯৩ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৬ জন এবং নিউমোনিয়া-শ্বাসকষ্টে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৯৭ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, শীত এলেই ঠান্ডাজনিত রোগের প্রার্দুভাব হয় বরিশাল অঞ্চলে। আমরা ৬টি জেলার সবগুলো সরকারি হাসপাতাল, সেবাকেন্দ্রে শীতকালীন রোগের গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। দিনে দিনে রোগী বাড়লেও দ্রুত সময়ে চিকিৎসা পাওয়ায় মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি। শীত কমতে শুরু করলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কমবে।
এদিকে বরিশাল নগরী ঘুরে ও শহর লাগোয়া উপজেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর এলাকার চেয়ে গ্রাম অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হেলাল বলেন, এরচেয়ে অন্যান্য বছর বেশি শীত লাগলেও এবার হাত-পা সব বরফ হয়ে যাচ্ছে। গত বছর শৈত্যপ্রবাহেও মাঠে সবজি তুলেছি। কিন্তু এ বছর কিছুই পারছি না।
সদর উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের করিমন বেগম বলেন, আজ দুদিন ধরে নাতি-নাতনিদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছি। তারা ঘরেই থাকছে। এত শীত আগে কখনও পাইনি।
বরিশাল নগরীর বাসিন্ধা সাগর বলেন, শীতের প্রভাব ৩/৪ দিনে কেটে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু গত দুইদিন ধরে যে শীত লাগছে তাতে হার পর্যন্ত কেঁপে যাচ্ছে। সামনের দুই-তিন দিন কাটানোর জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসলাম।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের পোশাকের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রেতারা।
সিটি মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, শৈত্যপ্রবাহ যে কয়দিন চলবে ততদিন আমাদের দোকানে ক্রেতা বেশি। দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছি না। শীত কমলে এই চাহিদা কমে যাবে।
বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, শনিবার বরিশালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রোববার তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এই মৌসুমে বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী দুই দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে।
মন্তব্য করুন