সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা সড়কের ছায়ার হাওর এলাকায় দুটি সেতু নির্মাণের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে এলাকাবাসী আন্দোলনে নেমেছেন। শুক্রবার সেতু নির্মাণ স্থানে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। যেখানে সেতু নির্মাণ হচ্ছে, হাওরের বা বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজে লাগবে না। হাওররক্ষা বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এলাকাবাসী জানান, দিরাই-শাল্লা-জলসুখা সড়কের আঙ্গারুয়া গ্রামের পাশে সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে সেতুর নির্মাণ স্থান উত্তরে সরিয়ে নেওয়া হয় গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকের সড়কে। এলাকাবাসী মনে করছেন, এখনকার স্থানে সেতু হলে জলাবদ্ধতার পানি ছাড়া হাওরের কোনো পানি নিস্কাশন হবে না। কেবল সরকারি টাকার অপচয় হবে।
আরেকটি সেতু করা হচ্ছে আনন্দপুরের বড়খালে। এটিও পশ্চিমে সরিয়ে বড়খালের মধ্যে করলে ভালো হতো। ওখানেও মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এটি সরিয়ে বড়খালের বাঁধের পূর্বদিকে আনা হচ্ছে। এ সেতুও পানি নিষ্কাশনে কাজে আসবে না। বরং কোনো কারণ ছাড়াই সড়ক আঁকাবাঁকা তৈরি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আনন্দপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দরশন মাইষ্য বললেন, গত বছর সেতু করার লাগি (জন্য) সড়কে মাপামাপি হইছিল, তারা কইছিল রাস্তা সুজা করা ও বর্ষায় পানি যাওনের লাগি সড়কে ব্রিজ (সেতু) বানাইবো (করবে)। পরে একদল মানুষ মাটি পরীক্ষাও করেছে, অখন দেখি অন্য জাগাত বানাইতাছে, যেখানে দিলে পানি গেলনে এই জাগাত না দিয়া সড়ক বেকা তেরা কইরা করতাছে, ইখানো ব্রিজ করলে পানি চলনের কোনো কাম অইতো নায়, হুদা সরকারের টেকা নষ্ট করা অইবো, কামের কাম কোনতা হইতো নায়।
এলাকার সামজকর্মী বিকাশ চক্রবর্তী বললেন, যে চিন্তা করে সেতু তৈরি হচ্ছে, সেই কাজ মোটেও হবে না, সড়কে বারবার মাপ হচ্ছে, আর স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে, এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
এলাকার আরেক সমাজকর্মী পান্ডব রায় বলেন, শাল্লা সদর থেকে আনন্দপুর পর্যন্ত তিনটি সেতু হবে। একবার দেখলাম আঙ্গাউড়া গ্রামের পাশে লাল নিশান, দুদিন পরে দেখি এসব নাই। পরের দিন দেখি নওয়াগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে সড়কে লাল নিশান, আবার শুক্রবার সকাল থেকে নওয়াগাঁও গ্রামের উত্তর মাথায় সড়কে মেশিন দিয়ে মাটি কাটছে। ওখানে সেতু হলে পানি নিষ্কাশনের কাজে আসবে না। প্রথম যেখানে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেখানে করলে কাজে লাগত।
গ্রামের অরবিন্দু বিশ্বাস বললেন, সড়ক বিভাগের লোকজন এলাকাবাসীকে সেতু কোথায় হবে ম্যাপও দেখাতে পারছেন না।
এ ছাড়া সুখলাইন গ্রামের দক্ষিণ পাশের সেতুতে পাইলিং সঠিকভাবে হচ্ছে না দাবি করেছেন এলাকাবাসী। পাইলিংয়ে নিচের দিকে নয়টি রড এবং উপরের দিকে ১৮টি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এলাকাবাসী এটি ডিজাইন মোতাবেক হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওখানকার দুটি সেতু নির্মাণে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এটি মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-আজমিরিগঞ্জ সড়ক প্রকল্পের কাজ। সেতু নির্মাণের স্থান নিয়ে এলাকায় ভিন্নমত তৈরি হওয়ায় আমরা শনিবার সকাল থেকেই সরেজমিনে দেখতে এসেছি। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যেও সেতুর স্থান নিয়ে আলাদা আলাদা মতো রয়েছে। আমরা বলেছি, তারা যেভাবে উপকৃত হন, সড়ক এবং সেতুও যাতে ঠেকসই হয়, হাওরের ফসলের জন্য যেখানে করলে উপকার হয়, সেটি নির্ধারণ করতে আমরা সেখানেই সেতু করব।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বললেন, আনন্দপুর ও আঙ্গারুয়া গ্রামের পাশের সেতুগুলোর স্থান নিয়ে এলাকায় কথা উঠেছে। আমরা ওখানে প্রকৌশলীদের পাঠিয়েছি, তারা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলবেন। কোথাও কোন অনিয়ম হচ্ছে না। ডিজাইনেই ফাইলিংয়ের নিচের দিকে রড় কম দেওয়া আছে।
মন্তব্য করুন