জহিরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৮ এএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রকৃতি থেকে বিলুপ্তির পথে বাবুইপাখি

তালগাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা। ছবি : সংগৃহীত
তালগাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা। ছবি : সংগৃহীত

গ্রাম বাংলার মাঠের ঐতিহ্য হলো বাবুই পাখির বাসা। আর আজ সেই বাবুই পাখিই হারিয়ে যেতে বসেছে। তালের পাতায় নিপুণ কারুকার্য করে বাবুই পাখি তার অপরূপ সৌন্দর্যের বাসা তৈরি করে। এক সময় প্রকৃতি দাবিয়ে বেড়ানো এ পাখিগুলো আজকালের বিবর্তনে বাংলার আবহমান চিরচেনা সবুজ প্রকৃতি থেকে একেবারেই বিলুপ্তির পথে। বাংলার এখানে ওখানে তাল গাছের পাতায় কত না মেধা শক্তি খাটিয়ে নিজেদের থাকার আবাসস্থল গড়তো বাবুই পাখি।

কবির ভাষায়, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। হ্যাঁ আবহমান গ্রাম বাংলার বাসা তৈরির যে নিঁখুত কারিগর, কবির কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার নায়ক সেই বাবুই পাখি শিল্পের বড়াই করতেই পারে। তবে তাল গাছের স্বল্পতা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বাবুই পাখি আজ নিজেই অস্তিত্ব সংকটে আছে বলে মনে করেন অনেকেই। সকলের ধারণা একই। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে একেবারেই বিলুপ্তির পথে প্রকৃতির চিরচেনা বাবুই পাখির বাসা। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগেও আমাদের গ্রামে তাল গাছে দেখা মিলতো বাবুই পাখির বাসা।

গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো এখন আর চোখেই পড়ে না বাবুই পাখি ও তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য। বাবুই পাখির নিখুঁত বুননে এ বাসা টেনে ছেঁড়াও কষ্টসাধ্য। প্রতি তালগাছে ১০০ থেকে ১১০টি বাসা তৈরি করতে সময় লাগে ৮-১০ দিন। খড়, কুটা, তালপাতা, খেজুর পাতা, ঝাউ ও লতা-পাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে তাদের বাসা বাঁধে।

এ বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় লাগে, ঠিক তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ছিড়ে নিচে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির কাজ শেষ হলে সঙ্গী খুঁজতে বের হয়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে বাসার ভিতর এক চিমটি গোবর রেখে জোনাকি পোকা ধরে এনে তার উপর বসিয়ে দেয় এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া বাবুই পাখির গায়ে ও পিঠে তামাটে কালো বর্ণের দাগ হয়। ঠোঁট পুরো মোসাকার ও লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। অন্য সময় বাবুই পাখির পিঠের পালকের মতই বাদামি হয়।

আমরা ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দুই পাশে তালগাছ, মাঠে তালগাছ আর সেই তালগাছের মধ্যেই অনেক বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু আগের মতো এখন আর বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ে না। একসময় পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙতো। কিন্তু এখন আর পাখির সেই কিচিরমিচি শব্দও শোনা যায় না।

বাসস্থান সংকটের কারণে এ পাখি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বাবুই পাখির বাসস্থানের প্রধান দুটি গাছ হচ্ছে তালগাছ ও খেজুর গাছ। কিন্তু এখন তাল গাছ আর খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। এজন্য পাখিগুলো চরম অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় পরিবেশ থেকে আজ বিলুপ্তির পথে এ বাবুইপাখি। এখন আমাদের সকলের উচিত বেশি করে তাল গাছ ও খেজুর গাছ লাগানো। তাল গাছ হলে যেমন আমরা বজ্রপাত থেকে অনেকটা নিরাপদে থাকবো ঠিক তেমনি খেজুর গাছ হলে আবার আমাদের রস ও গুড়ের চাহিদাও মিটে যাবে।

শুধু বাবুই পাখি না, জাতীয় পাখি দোয়েল, চড়ুই, শালিক, চিল, কাক, কোকিল প্রভৃতি সকল পাখিই আজ অস্তিত্ব সংকটে আছে, এখনোই যদি এ সব পাখি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়া যায়, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এসব পাখি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, সারা বিশ্বে ১১৭ প্রকার বাবুই পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মেলে। যদিও এই তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা পাওয়াও এখন দুষ্কর। পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচার শিকার ইত্যাদি কারণে সুন্দর এই পাখি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তালগাছ, নারকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছে ঝুলিয়ে বাসা তৈরি করে ‘দেশি বাবুই’ (Baye Weaver)। বরিশাল অঞ্চলে সাধারণত দেশি বাবুইয়ের বাস।

বন বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশি বাবুইকে প্রায়ই ফসলে ক্ষেতে দেখা যায়, অনেকে ধারণা করেন পাখিটি ফসল খায়। কিছু ফসল হয়তো খায়ও। কিন্তু ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ই তার প্রধান খাদ্য। তাই প্রকৃতপক্ষে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে উপকার অনেক বেশি করে।

প্রকৃতির সুন্দর এই পাখিটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগের পক্ষে চিকা মারার সময় ৩ জনকে পিটুনি

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হতে চান মেডিকেলে দেশসেরা শান্ত

আড়াইহাজারে বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়া অডিও রেকর্ডটি এডিট করা

এজলাসে বিচারককে যা বললেন আনিস আলমগীর

আ.লীগ নেতা জেলে, ঝুলে আছে ১২৩ কোটি টাকার সেতু নির্মাণ

সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি / ভর্তি মেলায় থাকছে শতভাগ পর্যন্ত মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ ও বিশেষ ছাড়

নরসিংদীতে তোপের মুখে পরী মণি

রাজনীতিক ও এমপি প্রার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের নীতিমালা প্রকাশ

চবিতে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও স্লোগান

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলো হাদিকে

১০

গোয়ালঘরে কৃষকের গরু জবাই করে রেখে গেল দুর্বৃত্তরা

১১

নতুন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করল ওয়াটারএইড বাংলাদেশ

১২

নার্ভাস ছিলাম, এখন এক্সাইটেড : সাবিলা নূর

১৩

চরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ২০ লাখ টাকার সেতু, নেই সংযোগ সড়কও

১৪

শীতে ফেসপ্যাক ব্যবহারের সঠিক সময় কোনটা? জানুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

১৫

ডিসেম্বরের ১৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭১ কোটি ডলার

১৬

সুদানে বাংলাদেশি ৬ শান্তিরক্ষী নিহত / ‘এখন সে চলে গেছে আমিও তো শেষ হয়ে গেছি’

১৭

পিএসএলের ধাক্কায় অনিশ্চয়তায় পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর

১৮

‘ওয়ানপ্লাস’ কারখানায় অভিযান, জরিমানা ১২ লাখ

১৯

খুলনায় প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার, বিলবোর্ডের ছড়াছড়ি

২০
X