পঞ্চগড়-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তাকে ‘কাদিয়ানি বানিয়ে’ অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাদিয়ানি বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় সেখানে পরিস্থিতি যে কোনো সময় উতপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তার এক সমর্থক ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি বরাবর এ অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড়-১ আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তার সমর্থক ক্বারী সফিকুল ইসলাম ও মো. খোকন সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের গইচপাড়া এলাকায় নৌকার প্রচার অফিসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাটের সমর্থক বদিউজ্জামান ও রব্বানীর নেতৃত্বে ৮-১০ জন সেখানে এসে নৌকার সমর্থকদের মারধর করে এবং প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তাকে কাদিয়ানি বলে অভিহিত করে। একইসঙ্গে নৌকার পক্ষে এ এলাকায় কোনো প্রচার চালাতে পারবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় তারা নৌকা মার্কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ক্বারী সফিকুল ইসলাম রোববার পঞ্চগড়-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, কমিটি অভিযোগ পেয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির চেয়ারম্যান অভিযোগে উল্লিখিত ১০ জনকে সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় সশীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখা দিতে বলেছে।
এদিকে, ঘটনা জানতে দৈনিক কালবেলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে নৌকা মার্কার প্রার্থী নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তা বলেন, আমি একজন সাচ্চা মুসলমান। কোনোভাবেই কাদিয়ানিদের অনুসারী নই। আমার পরিবার সুন্নি মুসলমান, আমার বাবা হজ করে এসেছেন। আমার বড় ভাইও হাজি, আমিও হজ করে এসেছি। কিন্তু তারা নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করছে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুক্তা বলেন, ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নিশ্চিত পরাজয় জেনে আমার ও আমার কর্মী-সমর্থকদের নামে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকরণ প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আমাকে কাদিয়ানি বলে অভিহিত করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট আমাদের দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক। আমাদের দল অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাসী। অথচ তারা নির্বাচনী প্রচারে ধর্মকে এভাবে ব্যবহার করছেন; যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা ছাড়া এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই আমি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।
তবে নৌকার প্রার্থীদের মারধর এবং কাদিয়ানি বলার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার সাদাত সম্রাট। তিনি বলেন, নাঈমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তাকে মুসলমান হিসেবে জানি। তাকে কাদিয়ানি বলার প্রশ্নই আসে না। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কে কোথায় তাকে কাদিয়ানি বলেছে বিষয়টি আমি অবগত নই।
উল্টো সম্রাট অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে নৌকা মার্কার লোকজন। তিনিই আমার কয়েকটি নির্বাচনী প্রচার অফিস ভাংচুর করেছেন। আমি চাই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসুক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।
এদিকে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি (তদন্ত) রঞ্জু আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন