সিলেট বন বিভাগের সুনামগঞ্জ রেঞ্জাধীন শক্তিয়ারখলা বিটের ঢুলারা বিজিবি ক্যাম্প এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির একটি বনছাগল উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, বন বিভাগের সহায়তায় উদ্ধার হওয়া এ বনছাগলটি 'আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)'-এ বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কমলগঞ্জের রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায় মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার জানান, স্থানীয় বন বিভাগ আমাকে প্রথমে জানায়। আমি তাদের ছবি তুলে পাঠাতে বলি। তারা ছবি তুলে দেওয়ার পর আমি মোটামুটি নিশ্চিত হই এটা বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী বনছাগল হবে। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান এটা এ বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত। এ প্রজাতির বনছাগল দেশে বিরল।
মির্জা মেহেদী সরোয়ার আরও জানান, উদ্ধার হওয়া বনছাগলটি রেড সেরো। বাসস্থানের ক্ষতি এবং শিকারের জন্যে এ প্রজাতির বনছাগলের অস্তিত্ব পুরো পৃথিবীতে হুমকির মুখে। এ বনছাগলগুলো মূলত সন্ধ্যায় ও ভোরে খেতে বের হয় এবং দিনে লুকিয়ে থাকে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, প্রাণিটিকে আমরা অনেক খাবার দিয়েছিলাম। কিন্তু সে পানি ছাড়া অন্য কিছু খায়নি। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা বনছাগলটিকে অবমুক্ত করব।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উদ্ধার হওয়া বনছাগলটি গতকাল মঙ্গলবার রাতে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে রেখে আমাদের তত্ত্বাবধানে বনছাগলটি সুস্থ ও ভালো আছে কিনা সেটা দেখলাম। প্রানীটা সুস্থ আছে। যতদূর দেখলাম আমাদের কাছে রাখলে তার সমস্যা হবে তাই গভীর রাতে কমলগঞ্জের রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে ছেড়ে দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ বলেন, আমাদের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে বনছাগলের চমৎকার বুনো পরিবেশ আছে। গত কয়েক বছর আগে আমরা গবেষণার জন্য ক্যামেরা লাগিয়ে ছিলাম, সে সময় বাচ্চাসহ ছবি পেয়েছি। এটাকে বুধবার রাতে সেখানেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, এ প্রজাতির বনছাগল দেশে বিরল। পুরুষ সেরো প্রায় ১২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ২০১৫ সালে আইইউসিএন বাংলাদেশের মূল্যায়ণ অনুযায়ী সেরো বাংলাদেশে বিপন্ন, বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন। বাংলাদেশে দুই ধরনের সেরো থাকতে পারে, লাল সেরো আর ইন্দো–চায়নিজ সেরো। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন