দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের দাবিতে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় প্রায় ৫০ জন ডায়ালাইসিস রোগী জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামানের কার্যালয় ঘেরাও করেন। এসময় তারা ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।
জানা যায়, হাসপাতালটিতে দীর্ঘ চার মাস ধরে ডায়ালাইসিস সেবা ঠিকমতো হচ্ছে না। বাড়তি খরচ করেও মিলছে না ডায়ারাসিসের ওষুধ, ইনজেকশন, পানিসহ অন্যান্য উপকরণ। আর এতে দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র রোগীরা। অর্থের অভাবে উপকরণ কিনতে না পারায় জীবন রায় তাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে বলে জানান তারা।
এক কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিডনি ডায়ালাইসিসে জন্য সাধারণত ডায়ালাইজার ৮০০, ব্লাড লাইন ২৪০, সেলাইন ১০০, হেপারিন ইনজেকশন ৩৯০, জেনটিন ও এভিল ইনজেকশন ২০, গ্লোভস ৫০, সিরিঞ্জ ২০, রেনাল কেয়ার- এসি ও রেনাল কেয়ার- বি পানি- ৯০০, টেপ, হেক্সিসল ও অন্যান ৫০ টাকা, ডায়ালাইসিস ৪০০ ও ৩০ টাকা চাঁদাসহ ২৯শ টাকা খরচ হয়।
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে রোগীরা জানান, তারা ডায়ালাইসিস করতে না পারায় তাদের জীবন সংকাটাপন্ন হয়ে পড়েছে। অনেকে জীবন বাঁচাতে বাহির থেকে রিএজেন্ট কিনে এনে ডায়ালাইসিস করার কথা জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ-বি ফুইডসহ উপকরণ না থাকায় গত চার মাস ধরে ডায়ালাইসিস প্রায় বন্ধ। দরপত্রের জটিলতার কারণে উপকরণ সরবরাহ না থাকায় ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে না। ২২ দিন ধরে ডায়ালাইসিস ইউনিটে কোনো ফুইড না থাকায় একেবারেই বন্ধের উপক্রম হয়ে যায়। রোগীরা টাকা দিয়েও ফুইড পাচ্ছেন না।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রায় ৫০ জন ডায়ালাইসিস রোগী জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামানের কার্যালয় ঘেরাও করেন। এসময় তারা ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়।
পরে হুইপ ইকবালুর রহিমের হস্তক্ষেপে ও আর্থিক সহযোগিতায় এবং হাসাপাতালের জাকাতের টাকায় ডায়ালাসিসের পানিসহ ফুইড সংগ্রহ করে চিকিৎসাব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়। তবে এই ব্যবস্থাপনা দিয়ে ৪/৫ দিন ডায়ালাসিস চালানো সম্ভব হবে।
একটি সূত্র জানায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো ডায়ালাসিসের পানি কেয়ার-এসি এবং রেনাল কেয়ার-বি পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে করে সারা দেশে কিডনি ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
অপরদিকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগে ৩০টি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি বিভিন্ন সময় নষ্ট হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নেফ্রোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ডা. মো. ফজলে এলাহী বলেন, কিছু কিছু রোগীকে রেনাল কেয়ার- এসি ও রেনাল কেয়ার- বি পানি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে চরম সংকট রয়েছে।
এ বিষয়ে পরিচালক এ টি এম নুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিটে এখন ১১০ জন রোগী রয়েছে।
মন্তব্য করুন