দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে প্রার্থী হয়েছেন মোট সাতজন। এবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি এর আগে তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ওদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারদার।
এই দুই প্রার্থীর প্রচার ও জনসংযোগে চাঙা রয়েছে ভোটের মাঠ। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করে নিজের জন্য ভোট চাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। ব্যতিক্রম এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপর পাঁচ প্রার্থীর ক্ষেত্রে। তারা ভোটের মাঠে প্রচারে নেই।
এসব প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির মনিরুজ্জামান মনি, তৃণমূল বিএনপির ম্যানুয়েল সরকার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের শেখ নুরুজ্জামান মাসুম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মফিজুল ইসলাম গাজী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সুব্রত মন্ডল। এই পাঁচজনকে মোংলা-রামপালের অধিকাংশ মানুষই চেনেন না।
অচেনা ওইসব প্রার্থীকে নিয়ে ভোটাররা বলছেন, প্রচার না করে দলের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের জন্য আর এমপি প্রার্থী হয়ে নামের সাথে আলাদা তকমা লাগাতেই তারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ভোট না পেলেও যাতে ভোটের পরে নিজেকে জাহির করতে পারে। মোংলা পৌর শহরের ৭নং ওয়াডের বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, সারাদিন নৌকা আর ঈগলের মাইক বাজে। দুই প্রার্থী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের ধারে ধারে ভোট চাচ্ছেন। আর অন্য আরো কেউ প্রার্থী আছে আজ আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম।
মাদ্রাসা রোড়ের নারী ভোটার মন্নুজান বলেন, নৌকা প্রতীকের লোকজন এসে ভোট চেয়ে গেলে, ঈগলের লোক ভোট চায়। আর কোন প্রার্থী আছে কিনা আমি জানি না।
মোংলা উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মো. শাহজাহান সিদ্দিকী বলেন, নতুন কিছু রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হলে সেই দল থেকে অনেকে নতুন প্রার্থী হয়েছেন। তারা স্বল্প সময়ে মাঠ গোছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনোদিন অংশ নিয়ে জনপ্রতিনিধি হননি। তাই তাদের অধিকাংশ মানুষই চেনেন না। এ কারণেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও ভোটারদের ভালোবাসা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মোংলার সাধারণ সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ বলেন, বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এক্ষেত্রে কথিত কিংকস পার্টির বিভিন্ন দল থেকে অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। ওইসব দলের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে হবে তাই দিয়েছে। কিন্তু যাদের প্রার্থী করা হয়েছে তাদের কোনো পরিচিতি নেই, তাদের কেউ চেনে না বা তাদের সম্পর্কে কেউ জানে না। তারা অচেনা অজানা।
এ বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ম্যানুয়েল সরকার বলেন, তার বাড়ি মোংলার চিলা এলাকায় হলেও তিনি ঢাকায় রাজনীতি ও ব্যবসা করেন। দল থেকে তাকে বাগেরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন তাই প্রার্থী হয়েছেন।
অন্যদিকে বাকি প্রার্থীদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় কেউ কেউ জানান, জাতীয় পাটির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি একসময় মোংলা নিউমার্কেটে টিভি মেকার ছিলেন। এখনো সে দোকানটি রয়েছে। তবে তিনি এখন বসেন না। তার ছেলে টিভি সারার কাজ করে। মোংলা উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) সাধারণ ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৫ জন। এর মধ্যে পুরষ ভোটার এক লাখ ২৭ হাজার ১৭৭ এবং এক লাখ ২৭ হাজার ৭১৮ জন নারী ভোটার। এবারের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে সাতজন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন