শীতের শুরুতেই নওগাঁ জেলার সীমান্তঘেঁষা সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়েছে এবং সারা বিল এখন দেশি-বিদেশি পরিযায়ী পাখির আনাগোনায় মুখরিত। সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের জীববৈচিত্র্যের পটভূমিতে বলা হয়েছে বিলটি সাপাহার উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৩ কি.মি. পশ্চিমে অবস্থিত, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিল। প্রকৃত পক্ষে এ বিলের নাম ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাহিল ও কালিন্দর চার বিলের সমন্বয়ে এ জবই বিল।
বিলের উত্তরে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা দক্ষিণে ভারতঘেঁষা পুনর্ভবা নদী। এ বিলের আয়োতন প্রায় ১৫শ’ হেক্টর ভর বর্ষা মৌসুমে এর পরিধি বিস্তার লাভ করে প্রায় ২ হাজার হেক্টরে পরিণত হয়। সরকারি হিসাব মতে, বিলে খাসজমির পরিমাণ ৪০৩ হেক্টর।
এ বিলে যাতে সারা বছর পাখি থাকতে পারে সেজন্য এবারেই বিলের ভুতকুড়ী অংশে পাখির জন্য একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হবে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ বিলের নানা সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের দিকে স্থানীয় কিছু তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে বিলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ শুরু করেন।
তারা প্রথমে উপজেলা প্রশাসন, পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদারের সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন সভা সমাবেশ শুরু করেন। তাদের এ কাজে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীও যোগ দিয়ে কাজের গতিবিধি আরও বৃদ্ধি করেন ও সেই বছর থেকে তারা বিলের পাখিশুমারী বা জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন।
জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংস্থার লোকজন ও সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ কালবেলাকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ বিলে পাতি-সরালি, লাল ঝুটি-ভুতিহাস, গিরিয়া হাস, তিলি হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, ঠেঙ্গি হাঁস, চা পাখি, বেগুনী বক, বাজলা বক, শামুখ খোল, মাছ মুরাল, সাপ পাখি, চখা চখি, হরেক রকম হাঁসের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিলটি পাখির সমাহারে সারা বিল ভরে উঠবে।
তাদের জরিপ মতে, গত ২০১৯ সালে এ বিলে দেশি-বিদেশি মিলে মোট পাখির সংখ্যা ৫ হাজার ৫৯৩, ২০২০ সালে ৭ হাজার ৬৮৩, ২০২১ সালে ৯ হাজার ৭১২ এবং ২০২২ সালে বিলে মৎস্যশিকারিদের ব্যাপক দাপাদাপিতে পাখির সংখ্যা কমিয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৯২। ২০২৩ সালের পাখি জরিপ কাজ চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
(বৃহস্পতিবার) ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে এ জবই বিলে মৎস্য আহরণের শুভ উদ্বোধন করেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মাওলা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা খাতুন জানান, এ বছর এ বিলে ৫৫৫ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। গত বছর এ বিলে মৎস্য আহরণের পরিমাণ ছিল ৫২৭ টন।
মন্তব্য করুন