গাজী ফারহাদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাতক্ষীরায় সাংবাদিকের ছাদবাগানে ৩০০ প্রজাতির বৃক্ষ

নিজের ছাদবাগান পরিচর্যা করছেন ইয়ারব হোসেন। ছবি : কালবেলা
নিজের ছাদবাগান পরিচর্যা করছেন ইয়ারব হোসেন। ছবি : কালবেলা

সাতক্ষীরা সদরের তুজুলপুরে ইয়ারব হোসেনের ছাদবাগানে ৩০০ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে। দেশের বিরল প্রজাতির সকল গাছ রয়েছে তার সংগ্রহশালায়। আপেল আঙুর থেকে শুরু করে সুন্দরবনের সব গাছ দিয়ে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছেন ছাদবাগানটি। এদিকে এত প্রজাতির গাছ একসঙ্গে দেখে রীতিমতো অবাক হতে বাধ্য দর্শনার্থীরা।

ছাদবাগানের মালিক ইয়ারব হোসেন সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামের ইছহাক মোড়লের ছেলে। তিনি পেশায় সাংবাদিক। দীর্ঘ বছর ধরে জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তা ছাড়া তার একটি কৃষি জাদুঘর ও একটি গাছের পাঠশালা রয়েছে। ২০১৯ সালে বাড়ির দোতলার ছাদের ১ হাজার স্বয়ার ফিট জায়গাজুড়ে থরে থরে টবে সাজানো রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এত প্রজাতির গাছ এক সঙ্গে দেখে আবেগাব্লুত হয়ে যেতে বাধ্য যে কেউ।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ইয়ারব হোসেনের ছাদ বাগানে প্রায় ২৬ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। আরও রয়েছে পাঁচ প্রজাতির আপেল, নেশপতি, আঙুর, অ্যাবোডেকো, হাড়ভাঙ্গা, দরিয়ান, আলুবোখরা, কাজু বাদামসহ প্রায় ১৬৫ প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ।

তা ছাড়া রয়েছে কনকচাঁপা, করবী, লালজবা, টগর, কাঞ্চন, কামিনী, চাঁপা ফুল, কৃষ্ণতুলসি, শিমুল, গাঁদা, গোলাপ, গ্যাজানিয়া, গ্ল্যাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, জিনিয়া, ডায়ান্থাস, ডালিয়া, ডেইজি, ন্যাস্টারশিয়াম,পটুলেকা, পপি, পিটুনিয়া, প্যান্সি, ফ্লক্স, ভারবেনা, মনিং গ্লোরি, সিলভিয়া, সুইট পি, সূর্যমুখী, অপরাজিতা, কদম, করবী,কলাবতি, কেয়া, চম্পা, চামেলি, মাধবী লতা ,লিলি, শিউলি, শেফালীসহ প্রায় প্রায় শত প্রজাতির ফুল।

ঔষধি গাছের মধ্য রয়েছে জয়তুন,উলটকম্বল, তরুপ,চন্দাল, গদপান, সাদা ধুতুরা, জষ্ঠিমধু, ডায়াবেটিস গাছ, অ্যাজালিয়া, অ্যাস্টার, এন্টিরিনাম,কসমস, কার্নেশন, কৃষ্ণকলি, ক্যামেলিয়া, ক্যালেন্ডুলা সহ প্রায় ৫০ প্রতাতির বিরল ঔষধি গাছ। এখানে রয়েছে সুন্দরবনের কেওড়া, গরান, সুন্দুরি, ধুন্দুল, গোল, খলিসা, পশুর, ওড়া, গুলঞ্চ, বাইন।

শাক সবজি মধ্যে রয়েছে বেগুন, লাউ, কুমড়া, বিটকপি, ওলকপি, ফুল কপি, বাঁধাকপি, পুদিনার পাতা, ধনেপাতা, পেপুল, ঝাল, চূইঝাল, চোরো ক্যাপসিকাম, বল ঝাল, কামরাঙ্গা ঝাল, ধান ঝাল, পেঁয়াজ,পুঁইশাক, লেটুস পাতাসহ সব মিলিয়ে ৩০০ প্রজাতির গাছ।

বাগানের মালিক ইয়ারব হোসেন বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছের অবদান সবচেয়ে বেশি। প্রকৃতি বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে। তাই কোন জায়গা ফেলে রাখা উচিত নয়। সেটা ছাদ হোক, আবাদি জমি হোক কিংবা বাগান হোক সকল জমিকেই আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। চিন্তাচেতনা সঠিক থাকলে সবকিছুকে সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব। সুন্দর একটি চিন্তা থেকেই আমার ছাদের বাগানে ধীরে ধীরে প্রায় ৩০০ প্রজাতির গাছ লাগিয়েছি। অবসর সময়টুকু গাছের সাথে সুন্দরভাবে কেটে যায়। দিন দিন জিনিসপত্রের যে পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সে দিক দিয়ে বিবেচনা করে যদি সবাই যার যার যতটুকু সমর্থ্য অনুযায়ী এভাবে বাগান করি সে ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে নিজেদের চাহিদাটুকু মেটানো সম্ভব। দেশে চাহিদার তুলনায় ফলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এভাবে ছোট ছোট করে নিজেরা বাগান করলে নিজেদের চাহিদার পাশাপাশি মোট চাহিদা মেটাতে সক্ষম হব।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুব কষ্ট করে সংগ্রহ করেছি গাছগুলো। প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে ছাদ বাগানটি সাজিয়েছি। এখানে অনেক প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় গাছ রয়েছে। যেগুলো মানুষ এখন চাইলেই দেখতে পারে না, সেক্ষেত্রে অনেক দর্শনার্থী বিরল প্রজাতির গাছগুলো দেখতে আমার বাগানে আসেন। এভাবে সংরক্ষণ করা হলে বিলুপ্ত প্রায় গাছগুলো প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

স্থানীয় শাহিন আলম বলেন, জীবনে কখনো দেখা হয়নি এমন অনেক গাছ দিয়ে ছাদের বাগানটি সুন্দর করে সাজিয়েছে ইয়াবর হোসেন। খেয়াল করলে দেখা যায় গ্রামের ছাদগুলো ধান শুকাতে কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে এমন ভিন্নধর্মী চিন্তা পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলকে। জনপদের মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির অনেক কাজ একসাথে দেখতে। ইয়ারব হোসেন রীতিমতো প্রশংসা পাওয়ার মতো একটি বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমল হোসেন বলেন, ইয়ারব হোসেন বরাবর কৃষিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন। ফ্রিতে রাসায়নিক সার বিতরণ থেকে শুরু করে নানাবিধ কার্যক্রম নিজ উদ্যোগে করে আসছেন। তার বাড়ীর ছাদে রয়েছে নাম না জানা শত শত গাছ। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ পরিশ্রম করে এত গাছের সমারহ এক সাথে গড়েছেন। তিনি রিতিমত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। তার ছাদবাগান দেখে যে কেউ উৎসাহ পাবে নিজের অনাবাদি জায়গাটুকুতে বাগান করতে। সেটাতে নিজের চাহিদা মেটানো শতভাগ সম্ভব। পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করাও সম্ভব।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালন কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছাদের ওপরে একসাথে এত প্রকারের গাছ সত্যিই অভাবনীয়। তিনি যে কাজটি করেছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ওখানে পরিদর্শন করা হবে একই সাথে তাকে সার কীটনাশক থেকে শুরু করে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তা ছাড়া তার ওখানে যে বিলুপ্তি প্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসপাতালের টয়লেটের ঝুড়িতে মিলল নবজাতকের মরদেহ

২৫ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছাত্রীকে হত্যা করে বেলাল

পাকিস্তানে বিক্ষোভ / ‘ভারত আক্রমণ করলে কাশ্মীরিরাই প্রথম সারিতে লড়বে’

কাশ্মীর সীমান্তে দুপক্ষের গোলাগুলি

রাজধানীতে ঝুটের গুদামে আগুন

বার কাউন্সিল পরীক্ষা আজ, ভুয়া প্রশ্নপত্র ছড়ানোয় গ্রেপ্তার ১

ধৈর্য ধরবে কি ভারত-পাকিস্তান?

৯ মাস পর শহীদ মিঠুর মরদেহ উত্তোলন

২৫ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

সামরিক শক্তি দেখাতে নেমেছে ভারত-পাকিস্তান

১১

ভারত-পাকিস্তান / পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ, সব কিছুতেই নিষেধাজ্ঞা

১২

সিলেট মেডিকেলের সাবেক উপাচার্যসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

১৩

টিভিতে আজকের খেলা

১৪

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

নারায়ণগঞ্জে টাকা নেওয়া সেই ওসিকে বদলি

১৬

জানাজায় গিয়ে ভাতিজার মৃত্যু, খবর শুনে মারা গেলেন চাচাও

১৭

স্বাস্থ্য পরামর্শ / একচেটিয়া মাতৃদুগ্ধ পান শিশু পুষ্টির স্বর্ণমান

১৮

ডামুড্যায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত

১৯

ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

২০
X