দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর ভরা মৌসুমে পর্যটকের খরা ছিল পর্যটন শহর কক্সবাজারে। এর মধ্যে ১ ডিসেম্বর বাণিজ্যিকভাব রেল চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটক বাড়তে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ ও সরকারি ছুটিতে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসগুলোর শতকরা ৮০ ভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ শতভাগ কক্ষ বুকিং হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
এদিকে ট্রেনে আসা যাত্রীদের টমটম চালকদের হাতে হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। যদিও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছেন বলে দাবি ট্যুরিস্ট পুলিশের।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের লাবনি পয়েন্ট, সুগন্ধ পয়েন্ট এবং কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বিচ বাইকে, কেউ জেট স্কিতে চড়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে পা ভিজিয়ে নিচ্ছেন।
প্রথমবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসা পর্যটক সাইফুল ইসলাম বলেন, ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। তাই তাদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে এলাম। সাগরের নীল জলরাশি দেখে মনটা জুড়িয়ে গেছে।
সিলটে থেকে আসা রহিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, রেলে চড়ে কক্সবাজার নেমেই টমটম চালকদের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়াও।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় দুঃখের ব্যাপার হলো সমুদ্র সৈকত ছাড়া আর কোথাও ঘুরে বেড়ানোর জায়গা নেই। যেসব পর্যটন স্পট রয়েছে সেখানে একদিনের বেশি ঘুরে বেড়ানো যায় না। তাই আগামীকাল চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হোটেল ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটকের দেখা মিলছিল না। ফলে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রেস্তোঁরা। হোটেল থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে অনেক শ্রমিক। তবে দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটক কক্সবাজারে আসবে এমনটাই মনে করেন তারা।
হোটেল সী-প্রিন্সেসের সিনিয়র ম্যানেজার মাজেদুল বশর চৌধুরী সুজন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কক্সবাজারে পর্যটক আসা কমেছে। তবে রেল চলাচল স্বাভাবিক থাকায় এবং মহান বিজয় দিবস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি সপ্তাহে আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়েছে। এর আগে ৬০-৭০ ভাগ কক্ষ খালি পড়েছিল।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিচ হলিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, চলতি সপ্তাহে হোটেলের ৬০ ভাগ রুম বুকিং হয়েছে। অথচ প্রতি বছর এমন সময় পর্যটকে টুইটুম্বর থাকে কক্সবাজার। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। হয়রানির অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অনেকে সৈকতে গোসল করতে নামে। বিপুল সংখ্যক পর্যটককে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে পর্যটকদের কাছে অনুরোধ গোসলে নামার আগে তারা যেন জোয়ার-ভাটার সময় দেখে নেন।
মন্তব্য করুন