যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ও শাশুড়িকে শারীরিক নির্যাতনের ২৫ দিন পর মারা গেলেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের স্ত্রী লাকী খাতুন (২০)। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে লাকীর বাবার বাড়ি উপজেলার ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাকী। এর আগে লাকী ও তার মাকে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার ঝাটিবেলাই গ্রামের ঝড় মণ্ডলের ছেলে আব্দুল ওরফে আবু তালেবের সঙ্গে বিয়ে হয় লাকীর। লাকী-তালেবের সংসারে সাত মাস আগে জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। বিয়ের পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক আনার জন্য লাকীকে প্রায় সময় চাপ প্রয়োগ করতো তার স্বামী আবু তালেব। এমতাবস্থায় গত ১৬ নভেম্বর যৌতুকের জন্য ফের চাপ প্রয়োগ করলে তার বাবা গরিব মানুষ এত টাকা কোথায় পাবে বলে জানায় লাকী। এ সময় লাকীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে তার স্বামী। একপর্যায়ে লাকীর শ্বশুর আবু তালেবের হাতে একটি বাঁশের লাঠি দিলে সেটি দিয়ে লাকীকে বেধরক মারতে থাকে। পরে মেয়েকে মারপিটের খবর পেয়ে লাকীর মা তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য আনতে গেলে তাকেও বেধরক মারপিট করে আবু তালেব।
পরে লাকীকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, পরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গত ২৮ নভেম্বর লাকী বাদী হয়ে তার স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমতাবস্থায় লাকি ও তার মা হাসপাতালে যাবার আগে লাকীর সাত মাসের কন্যা শিশুকে লাকীর ছোট বোনের কাছে রেখে যান। লাকীর ছোট বোন মাঝে মধ্যে ওই শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে যেতেন। পরে গত ৩০ নভেম্বর শিশুটির ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে জেলা শহরের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মারা যায় শিশুটি। এমতাবস্থায় ৫ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে আসে লাকী ও তার মা। বাড়িতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার মারা যান লাকী। স্বামীর নির্যাতনেই লাকীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তার মা আনোয়ারা বেগম। তিনি তার মেয়ে হত্যার বিচার চান।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. রেজাউল ইসলাম জানান, লাকী ও তার মাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় স্বামীকে প্রধান অভিযুক্ত করে শ্বশুর ও ভাসুরের নামে গত ২৮ নভেম্বর একটি মামলা করেন লাকী। পরে ঘটনার ২৫ দিন পর মারা যান লাকী। লাকীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যৃর আসল কারণ জানা যাবে। তখন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন