সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পথে পথে বিক্রি হচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা। বিজয়ের মাস এলেই শহর থেকে গ্রামে হাটবাজারে দেখা মেলে পতাকা বিক্রেতাদের। নানা আকারের পতাকা এবং লোগো সংবলিত মাথায়, হাতে বাঁধার ব্যান্ড। মাঝে মাঝে সামান্য মৃদু বাতাসে উড়ছে লাল-সবুজের রঙে আঁকা এসব কাপড়। আর এসব দেখে দেশ প্রেমে বিবেককে জাগ্রত করে ছুটে আসেছেন শিশু-কিশোর ও কিশোরীসহ নানা বয়সের মানুষ। আবার অনেকে কিনে নিয়েও যাচ্ছেন। বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, গাড়িতে, রিকশায় এমনকি দুই চাকার মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের সামনে দুলছে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা। এই লাল সবুজ দোলার মাঝে আছে এক অন্য সৌন্দর্য, আছে অহংকারের গল্প।
সোমবার সকালে উপজেলার পরিষদ মিলায়তন চত্বরে পতাকা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৬ ফুটের পতাকা প্রতি পিচ ২২০ টাকা, ৫ ফুট ১৭০ টাকা, সাড়ে ৩ ফুট ১৪০ টাকা, আড়াই ফুট ৭০ টাকা, দেড় ফুট ৪৫ টাকা আর ১ ফুট ২৫ টাকা এবং ফিতা আর ব্যান্ড বিক্রি করছেন ১০টা। প্রতিদিন এক একজনে ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি করে থাকেন।
এ দিকে প্রতিদিন প্রায় ১০ ফুট লম্বা একটি কঞ্চিই বাঁশের সাথে বড় ছোট আকারের পতাকা নিয়ে হরহামশায় ঘুরে বেড়ায় গ্রাম থেকে গ্রামে। কাঁধে ঝোলানো রয়েছে পতাকা ভর্তি ব্যাগ। আর মৃদু বাতাসে পতাকাগুলো উড়ছে। সারা দিন ঘুরে পতাকা বিক্রি করে তেমন বেশি লাভ না হলেও গর্ববোধ করেন মো. মাহাবুর রহমান (৩৪)। পেশায় ফেরিওয়ালা হলেও বিজয়ের মাসে তার পরিচয় ভিন্ন, বিজয়ের মাসে তিনি লাল-সবুজ পতাকার ফেরিওয়ালা নামেই পরিচিত। সারা বছর তিনি নানা রকম পণ্য ফেরি করে বিক্রি করলেও ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে তিনি ফেরি করে পতাকা বিক্রি করে স্বপ্ন বুনছেন।
আরেক পতাকা বিক্রেতা সাজেদুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম না হলেও পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি। মাত্র ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। লাল-সবুজের এই পতাকা অর্জনের ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এই বিজয় নিশান কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে ভালোই লাগে। ছোট-বড় সকলেই পতাকা কিনছেন।
পতাকা ক্রেতা লুৎফর রহমান জানান, তার মেয়ের জন্য একটি পতাকা, ফিতা ও ব্যান্ড কিনেছেন ৭০ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশেদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর বিজয়ের মাসে এসব বিক্রেতাদের কাছ থেকে পতাকা কিনতে দেখে আমরা গর্বিত হই। এদের কাছ থেকে কিনে ছোট ছোট বাচ্চারা যখন ছোট পতাকা হাতে কিংবা মাথায় ব্যান্ড আকারে লাগায় তখন এসব বাচ্চাদের দেখে আমাদের বুকটা গর্বে ভরে যায়। তবে পতাকার সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মন্তব্য করুন