মোস্তাকিম আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (বিজয়নগর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকের দৌরাত্ম্য, ধরাছোঁয়ার বাইরে পৃষ্ঠপোষকরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাপ। গ্রাফিক্স : কালবেলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ম্যাপ। গ্রাফিক্স : কালবেলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ৩৪ কিলোমিটার সীমান্ত পথ রয়েছে এই উপজেলায়। এত দীর্ঘ সীমান্ত পথ থাকার সুবাদে ওই উপজেলার অন্তত ৭০০ থেকে ৮০০ লোক মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। সীমান্ত পেরিয়ে বিজয়নগরে ঢুকছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। এতে তরুণ মাদক সেবনকারীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

এসব দেখে সচেতন মহল হতাশ হয়ে পড়েছে। নতুন-পুরোনো মিলে মাদক ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালাচ্ছে মাদক কারবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ কেউ বাদ যাচ্ছে না মাদকের সিন্ডিকেট থেকে। প্রতিনিয়ত প্রশাসনের অভিযানে ধরাও পড়ছে মাদক কারবারিরা। তবু থামছে না মাদকের ঢল। কেনো মাদক ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না- এসব প্রশ্ন সচেতন মহলের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজয়নগরে মাদক কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন মুষ্টিমেয় রাজনৈতিক নেতা, ফাঁড়ির কিছু পুলিশ এবং অনেক জনপ্রতিনিধিও। বিজয়নগর উপজেলায় এমন অনেক জনপ্রতিনিধি এবং তাদের নিকট আত্মীয় রয়েছেন, যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। আবার সরকারের নীতিনির্ধারক উচ্চপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাও রয়েছে এই উপজেলায়, যাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তাদের অনেক নিকট আত্মীয়রা মাদকের সম্রাট হয়ে উঠেছেন, প্রকাশ্যে চালাচ্ছেন স্পট, উপার্জন করে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

বিগত ২০১৯ সালের দিকে মাদকের সঙ্গে জড়িতরা ক্রস ফায়ারের ভয়ে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিল। সে সময়ে অনেক মাদক কারবারি তৎকালীন জেলার পুলিশ সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। মাদক মামলায় অনেকের সাজাও হয়েছিল। এরপরও তারা ছাড়ছেন না মাদক কারবার। তাদের দাপটের কারণে সাধারণ মানুষ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুসন্ধানে বিজয়নগর উপজেলায় মাদকের সহজলভ্যতার নেপথ্যে পুলিশের ইন্ধনের ইঙ্গিত মেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই পুলিশের গাফিলতি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের কথা জানান। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী লিটন জানান, বিজয়নগর উপজেলার আউলিয়া বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই পংকজ বাবুর নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে গড়ে উঠেছে দহরম মহরম। প্রায় ২০০ জনেরও বেশি মাদক কারবারি থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকেন নিয়মিত। শুধু পঙ্কজ বাবুই নই, যে সকল স্পট দিয়ে মাদক পাচার হয় ওই সকল এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে নিয়মিত মাসোহারা তুলছেন কিছু সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা বিভিন্ন স্পষ্ট একেকজন ভাগ করে নিয়েছেন। যেমন সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে মাসোহারা তুলেন এসআই সাঈদুল। এএসআই পিজুশ এবং এসআই মামুন মাসোহারা তুলেন চান্দুরা এলাকা থেকে। এসআই মেহেদী মাসোহারা তুলেন হরষপুর এলাকা থেকে। এভাবেই প্রতি মাসেই মোটা অঙ্কের টাকা চলে যায় পুলিশের পকেটে। কখনো সরাসরি আবার কখনো কোনো মাধ্যমে টাকা নেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।

যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিজয়নগর থানার ওসি রাজু আহমেদ বলছেন, প্রশাসন মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনোভাবেই মাদক কারবারিরা ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। বিগত ১ বছরে ২৭৭টি মাদক মামলা হয়েছে এবং প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিগত কয়েক দিনে আমরা অনেক অভিযানও পরিচালনা করেছি যেখান অনেক স্কপ সিরাপ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ আহাদ মিয়া (২৭), আনোয়ার হোসেনসহ (২৫) আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যায় তারা দরিদ্র শ্রেণির লোক এবং তারা মালিকও না। কিন্তু কোনোভাবেই তারা তাদের মালিকের নাম বলেন না। আর এই সময়ের মধ্যে আমার বদলির আদেশ চলে আসে। এই অল্প সময়ে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মাদকমুক্ত করার জন্য অত্র এলাকাকে।

এ ব্যাপারে বিজয়নগর থানার ওসি তদন্ত জামিল আহমেদ বলেন, কোনো ফাঁড়ির অফিসার অথবা প্রশাসনের কেউ টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ যদি দিতে পারে, তবে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সর্বদা তৎপর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, এখনও মাদক পুরোপুরি বন্ধ হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকদিন ধরে অসুস্থ, আগামীকাল আমার অপারেশন। তা ছাড়া নিয়মিত আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কারো বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অধিদফতর ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে মাদক বন্ধের জন্য ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুয়াকাটা ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরা হলো না দুই বন্ধুর

চীন নিয়ে নিজের বাড়িতে গোপন বৈঠক বাইডেনের

হঠাৎ মিরপুরে সেনা মহড়া

ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের বিবৃতি

ন্যায়বিচার চান তমা মির্জা

ভারতের সঙ্গে অতীতের সরকারের নীরবতার দিন শেষ : পানিসম্পদ উপদেষ্টা

ভারতে ইলিশ পাঠানোর কারণ জানালেন মৎস্য উপদেষ্টা

শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ঢাবির ক্লাস শুরু

বড় হারের পরও কিছু প্রাপ্তি দেখছেন শান্ত

ভেলকি দেখিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে মার্ক্সবাদী নেতা

১০

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আ.লীগ নেতার রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা

১১

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ,  নিহত অন্তত ৩০ 

১২

ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীকে হুমকির অভিযোগ

১৩

কক্সবাজারে শহীদ পরিবারের পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৪

‘সমন্বয় কমিটিতে কোনো ইসলামিক স্কলারগণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি’

১৫

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৬

ভারতে ইলিশ রপ্তানি, অন্তর্বর্তী সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

১৭

রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

১৮

প্রতিপক্ষকে ৯ গোলে বিধ্বস্ত করল আর্জেন্টিনা

১৯

গুমের শিকার / ‘১০ বছর ছেলের বিছানায় কাউকে ঘুমাতে দিইনি’

২০
X