বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:০৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বগুড়া-২ : ১০ বছরে যেন ‘সম্পদের পাহাড়’ গড়েছেন জাপা এমপি

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ছবি : কালবেলা
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ছবি : কালবেলা

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর ২০১৩ ও ২০১৮ সালে আয় ছিল মাত্র ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। আর ২০২৩ সালে এসে সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬১ টাকা। শুধু তাই নয় বেড়েছে নগদ টাকা ও জমির পরিমাণ। নিজের যেমন নগদ অর্থ ও সম্পদ বেড়েছে, একইভাবে স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও নগদ অর্থ ছাড়াও সম্পদ ও ব্যাংকে জমা করা অর্থ বেড়েছে অস্বাভাবিক। টানা দুই বাবের এমপি হবার কারণে তার আয় ও সম্পদ বেড়েছে।

প্রথম দফা থেকে শুরু করে এবার পর্যন্ত তিন দফা নির্বাচনের আগে তিনি যে হলফনামা দাখিল করেছেন তা বিশ্লেষণে দেখা গেছে- রীতিমত তিনি ও তার পরিবার যেন সম্পদের পাহাড়ে বসেছেন। প্রথম দুদফার হলফনামায় আয়ের অংকে তেমন কোনো হেরফের না হলেও এবারের হলফনামা যেন বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

২০১৩ সালে দাখিল করা হলফনামায় তার আয় ছিলো ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে বছরে তার আয় হতো ২০০০ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া পেতেন ১ হাজার ৮০০ টাকা আর ব্যবসা থেকে আয় ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮০০টাকা। ২০১৮ সালেও তা ছিল একই। এই দুই দফাতেই তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না।

কিন্তু ২০২৩ সালের হলফনামায় পাল্টে গেছে সেই চিত্র। নিজের আয় তো বেড়েছেই, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়ও যুক্ত হয়েছে ব্যাপক। এবার তিনি নিজের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬১ টাকা। এরমধ্যে কৃষিখাত থেকে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যবসার আয় ৭ লাখ টাকা, ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫৬ টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে আয় দেখানো হয়েছে আরও ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৫ টাকা। এ ছাড়া যে নির্ভরশীলদের কোনো আয়ই ছিলো না তাদের এখন বার্ষিক আয় ২৮ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা।

এর মধ্যে কৃষিখাতে বার্ষিক আয় ২৪ হাজার ৭২০ টাকা, বাড়ি বা দোকান ভাড়া ৬০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে আমানত ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪৮০ টাকা, তাদের পেশাগত আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

২০১৩ সালে তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার এবং স্ত্রীর কাছে ছিল ৫০ হাজার টাকা। তার নামে ব্যাংকে কোনো জমা টাকা না থাকলেও স্ত্রীর নামে ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে সময় তার নিজের নামে ছিল ৭৭ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল আর স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল। দুজনের কাছেই ছিল ৭০ হাজার টাকার মূল্যের স্বর্ণালংকার, নিজের নামে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ছিল ৭০ হাজার টাকার আর স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র নিজের নামে ছিল ৮০ হাজার টাকার আর স্ত্রীর ৫৫ হাজার টাকার।

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনের আগে এসে তার নগদ টাকা কমে হয় দেড় লাখ, আর স্ত্রীর বেড়ে দাড়ায় দেড় লাখ টাকা। আগে তার নামে ব্যাংকে কোনো টাকা জমা না থাকলেও একাদশ নির্বাচনের আগে ব্যাংকে তার নামে ছিল ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকা। আগের বার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে টাকা থাকলেও এ সময় কোনো টাকা দেখানো হয়নি। এ সময় তার মোটরসাইকেলের সঙ্গে যুক্ত হয় একটি ল্যান্ড ক্রুজার কার যার দাম ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯১ টাকা। আগে স্ত্রীর নামে মোটরসাইকেল থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তা আর দেখানো হয়নি। ইলেক্ট্রনিক ও আসবাবপত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি এ সময়। তবে নিজের নামে যুক্ত হয়েছে দেড় লাখ টাকা দামের একটি পিস্তল ও একলাখ টাকা দামের মিনি রাইফেল।

২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার কাছে নগদ টাকা বেড়ে দাড়ায় ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৬ টাকা। স্ত্রীর কাছে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৪ টাকা। এ সময় নির্ভরশীলদের কাছেও নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৮২ টাকা। ব্যাংকেও তার জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে, এখন সেখানে আছে ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮ টাকা। আগের বার স্ত্রীর নামে কোনো টাকা না থাকলেও এখন আছে ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৬ টাকা। এ ছাড়া নির্ভরশীলদের নামেও ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৩ টাকা। এ সময় স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্রের স্থায়ী আমানত দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। আগের গাড়ির পরিবর্তন হয়ে এখন হয়েছে এক কোটি এক লাখ টাকা দামের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের একটি ট্রাক দেখানো হয়েছে।

আগের দুই দফার হলফনামায় স্বামী-স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা দামের ম্বর্ণালঙ্কার থাকলেও এবার তার কাছে ৩০ তোলা, স্ত্রীর ৪০ তোলা ও নির্ভরশীলদের নামে ৫০ তোলা স্বর্ণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ দফায় এসে তার কাছে কোনো ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী না দেখিয়ে স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকার এবং নির্ভরশীলদের নামে ২ লাখ টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্রের তার আগের পরিমাণ ঠিক রেখে স্ত্রীর টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে হয়েছে ২ লাখ টাকার। এবার এসে তার ব্যবসায় স্থায়ী আমানত দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৭২ টাকা।

দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্থাবর সম্পদ বিবরণীতে তার নিজের নামে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১ দশমিক ৪০ শতক এবং স্ত্রীর নামে ১লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৭ শতক কৃষি জমি; নিজের নামে ১লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, নিজের টিনশেড কাঁচাপাকা বাড়ি ও স্ত্রীর নামে ৭ শতক জায়গার ওপরে পাকাবাড়ি এবং নিজের ৮০ হাজার টাকা দামের একটি পুকুরের কথা উল্লেখ করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় আগের পরিমাণ ঠিক থাকলেও শুধু পুকুরের আর্থিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

২০২৩ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তার দাখিল করা হলফনামায় কৃষি জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৯৩ দশমিক ২২ শতক, যার আর্থিক মূল্য ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ১৫০ টাকা। স্ত্রীর ৭ শতক জমি থেকে তার বেড়ে হয় ১৫৬ দশমিক ৮ শতক যার আর্থিক মূল্য ২৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০ টাকা। আগে যেখানে দুই দফা শুধুমাত্র নিজের নামে অকৃষি জমি দেখানো হয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার, সেখানে এইবার এসে হয়েছে ১০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, নিজের পাশাপাশি প্রায় একই পরিমাণ টাকার অকৃষি জমি দেখানো হয়েছে নির্ভরশীলদের নামে।

আগে নিজের নামে টিনশেড বাড়ি থাকলেও এবার হয়েছে ২টি দালান বাড়ি যার মূল্য ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা এবং একটি ফ্লাট যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ১৯৫ টাকা। আগে স্ত্রীর নামে ৭ শতক জমির ওপরে একটি বাড়ির কথা থাকলেও এবার সেটি দেখানো হয়নি।

দশম সংসদ নির্বাচনে রূপালী ব্যাংক মহাস্থান গড় শাখায় তার সিসি (হাইপো) ঋণের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ টাকা, একাদশ নির্বাচনের সময় একই ব্যাংকে ওই ঋণের পাশাপাশি যোগ হয় মোটরকার ঋণের ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৪২ টাকা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অগ্রণী ব্যাংক মহাস্থান শাখায় তার ৩০ লাখ ৯০ হাজার ৮৭১ টাকা এবং মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড ঢাকার মতিঝিল শাখায় ৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৯ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।

পাশাপাশি তার ওপরে নির্ভরশীলদের তথ্যে অগ্রণী ব্যাংক মহাস্থান শাখায় ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৫ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। আগের দুদফা নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না থাকলেও এবার সেখানে যুক্ত হয়েছে দুটি মামলার সংখ্যা। মামলা দুটিই দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। ২০২১ ও ২০২২ সালে দায়েরকৃত মামলা দুটি এখন তদন্তাধীন বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রুরা ওত পেতে আছে

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গ্রেপ্তার

‘গণহত্যায় উসকানিদাতা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে’

জাবিতে গণধোলাইয়ের শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য

বৈদেশিক ঋণ আবার ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেলেন নৌবাহিনীর ২শ’ সদস্য

সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

ডিপিডিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমবায় সমিতির নতুন কমিটি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়ে আলী রীয়াজের ফেসবুক স্ট্যাটাস

১০

আলজাজিরার অনুসন্ধান / যুক্তরাজ্যে ৩৬০টি বাড়ি কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

১১

রূপপুর পারমাণবিকের প্রথম ইউনিটে ডামি ফুয়েল লোডিং শুরু

১২

মহেশখালী থেকে অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছে নৌবাহিনী

১৩

নকল সোনার মূর্তি দিয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২

১৪

কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রবাসী যুবক নিহত

১৫

ভুল সংশোধনী ও দুঃখ প্রকাশ

১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যানজট নিরসনে পুলিশের অভিযান

১৭

মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন গৃহবধূ শারমিন

১৮

সন্তানকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগ, সৎ মা আটক

১৯

বাকৃবিতে জৈব বর্জ্যের বিকল্প শিল্পায়ন বিষয়ে আলোচনা সভা

২০
X