প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার পক্ষ থেকে সুলভ মূল্যে খাদ্য সহায়তার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে খাদ্য গুদাম ও ডিলারদের কারসাজিতে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। এতে ঠকছে উপকারভোগীরা, কেজি প্রতি ১৫ টাকায় ৩০ কেজি চাউলের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ কেজির বিপরীতে ৩০ কেজির টাকাই গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। তবে চাউল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসারকে সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ও ডিলারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। তারা একে অপরকে দুষছেন।
বছরে পাঁচ মাস এই সুবিধা পেয়ে থাকেন ভোক্তারা। এর মধ্যে বছরের ‘মার্চ, এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর’ মাসে খোলাবাজারে এ কর্মসূচির চাউল বিক্রয় করা হয়। এর আগে এ কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা দরে প্রতি কেজি চাল পাওয়া যেত। গত বাজেটে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার (৮-৯ নভেম্বর) খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরসেন্সাস ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড খায়েরপট্টি এলাকায় ডিলারের আওতায় ৩২২ জন কার্ডধারী বা ভোক্তা রয়েছে। কয়েকজন ভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গেলে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।
উপজেলার চরসেন্সাস ইউনিয়নের খায়েরপট্টি বাজারের মাকসুদ বালার ডিলারে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক কার্ডধারীদের ৩০ কেজি চাউল ১৫ টাকা করে ৪৫০ টাকা রাখার কথা থাকলেও কার্ডধারীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। অথচ তাদের ২৬ থেকে ২৮ কেজি করে চাউল দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন উপকার ভোগী অভিযোগ করে বিষয়টি জানান। এ সময় প্যাকেট করা ৫০ কেজি ওজনের কয়েকটি বস্তা ওজন করে দেখা যায়, কোনো কোনো বস্তায় ৪৫ কেজি, ৪৬ কেজি, ৪৭ কেজি চাউল রয়েছে আর ৩০ কেজি বস্তায় ২৭ কেজি ২৮ কেজি। এদিকে চালের বস্তাসহ চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও বস্তা খুলে রেখে, অন্য বস্তায় চাল দিচ্ছে ডিলার।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ডিলার মালিক মাকসুদ বালা নিজেকে উপজেলার সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা রাজনীতি করি আমাদের অনেক খরচ আছে। আর দু’একটু অনিয়ম হতেই পারে। তা ছাড়া প্রায় বস্তায় চাউল কম রয়েছে, এ জন্য আমি কার্ডধারীদের বলেই ২৮ কেজি করে চাউল দিচ্ছি। ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে এভাবেই আমাদের চাউল দিয়েছে, যেখানে বস্তাপ্রতি চাউল কম রয়েছে ৩ থেকে ৫ কেজি করে। এই চাউলগুলোর ঘাটতি আমি কোথায় পাব? এত মালের শর্টের (কম) ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে অনেক কার্ডধারীদের চাউল দিতে পারবো না। বিষয়টি আমি ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, দেখা যায় ১০টা বস্তার মধ্যে ৫টি বস্তায় ৩ থেকে ৫ কেজি করে চাউল কম রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্যই আমরা সুবিধাভোগীদের ২৭ থেকে ২৮ কেজি করে চাউল দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ট্যাগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুনতাসির মামুনকে বলেন, আমি একটু বাহিরে আছি। ওখানে আজ চাউল বিতরণ করা হবে এটা আমার জানা নেই। ডিলার আমাকে কিছু জানায়নি। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাচ্ছি। ডিলার কোনো অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওসি এলএসডি ইকবাল হোসেন বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অধিকার আছে শতভাগ মাল বুঝে নেওয়ার এবং স্পটেই তাদের বুঝে নিতে হবে। বস্তা ছেড়া-কাটা থাকলে সেটাও সেলাই করে দিতে বাধ্য। ডিলাররা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি কম দেয় এবং আমরা যদি অভিযোগ পাই, তাহলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বিষয়টি আমি খাদ্য কর্মকর্তাদের বলবো এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন