কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যুবলীগ নেতা জামাল হত্যাকারীর লোমহর্ষক জবানবন্দি

দেলোয়ার হোসেন দেলু (বাঁয়ে) ও  যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত
দেলোয়ার হোসেন দেলু (বাঁয়ে) ও যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে আলোচিত যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। সে বোরকা পরে গুলি করে যুবলীগ নেতাকে হত্যা করা তিন ব্যক্তির একজন।

দেলু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বর্ণনা দিয়েছে সেই হত্যাকাণ্ডের। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মাসুদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা। কালো হাইস গাড়িতে পরিকল্পনা মতো গৌরীপুর বাজারে বোরকা পরে যায় আরিফ, কালা মনির ও দেলু। বাজারে জামালকে পাওয়া মাত্র মনির ও আরিফ দুটি করে গুলি করে। শেষে একটা গুলি করে দেলু। তখন পরিকল্পনা মতো দৌড়ে প্রথমে সিএনজিতে করে, পরে হাইসে উঠে চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকায় চলে যায় হত্যাকারীরা। সেখান থেকে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মাসুদ অন্য একটি হাইসে করে তাদের নিয়ে যান নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। নোয়াখালীতে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের মুরগির ফ্যাক্টরিতে আত্মগোপন করে তারা।

দেলোয়ার হোসেন দেলু আদালতে তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘দাউদকান্দিতে জমি বিক্রি ও দালান উঠানোর চাঁদা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয় জামাল-কামাল ও সুজন-শাকিল দুই গ্রুপের মধ্যে। এগুলো নিয়ে মারামারিও হয় কয়েক দফা। পরে দশ লাখ টাকা চুক্তিতে জামালকে হত্যার পরিকল্পনা করে প্রতিপক্ষ। এই বিষয়ে সোহেল সিকদারসহ আরও কয়েকজনের সহায়তার কথা বলেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে জিয়াকান্দি পাওয়ার হাউস থেকে একটি হাইসে উঠে আরিফ, মনির ও আমি বোরকা পরি। গাড়িটি আমাদের নিয়ে ঘণ্টা খানেক ঘুরাঘুরি করে আবার পাওয়ার হাউসে চলে আসে। সেখানে আরিফ আমাকে একটি ও মনিরকে একটি বন্দুক দেয়। তার কাছে রাখে আরও একটি। সেখান থেকে সিএনজিতে করে গৌরীপুর বাজারে চলে যাই। গৌরীপুর বাজারে আমাদের লোক জামালের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেয়। সন্ধ্যা নাগাদ তথ্য দেওয়া জায়গায় জামালকে দেখা মাত্র আরিফ ও কালা মনির দুটি করে গুলি করে। শেষে আমি একটি গুলি করি। লোক জড়ো হতে থাকলে আমরা দৌড়ে ভুলির রাস্তার মাথায় চলে যাই। সেখান থেকে জঙ্গল দিয়ে মোক্তারের গ্যারেজের কাছে গেলে শাহ আলী হাইস গাড়ি নিয়ে আসে। আমরা চান্দিনা কাঠেরপুল এলাকায় গিয়ে দেখি দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মাসুদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সে গাড়িতে উঠলে আরিফ বলে ‘জামাল শেষ’। তখন মাসুদ বলে ঠিক আছে। আমরা গাড়িতে করে আশ্রমের পাশে গেলে মাসুদ সৈকতকে দিয়ে ৫টা ফেনসিডিল আনে। আমরা সবাই মিলে খাই। মাসুদ অস্ত্রের ব্যাগ সৈকতের কাছে দিয়ে বলে তার বাড়িতে রেখে আসতে। আমাদের মোবাইলগুলো পলিথিনে করে ফখরুলের কাছে রেখে যাই। সেখান থেকে মাসুদসহ আমরা নিমসার বাজার এলাকায় চলে যাই। ওখানে মাসুদ ফোন করে অন্য একটি হাইস নিয়ে আসে। সেই হাইসে করে মাসুদসহ আমরা নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মুরগির ফ্যাক্টরিতে চলে যাই। ফ্যাক্টরিতে গোসল করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরে আমি শনির আখড়া আমার খালার বাড়িতে চলে যাই। সেখান থেকে র‌্যাব আমাকে গ্রেপ্তার করে।’

জামাল হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আদালতে দেলু, সৈকত ও গাড়িচালক সুমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এতে মাসুদসহ পেছনের সকল মাস্টার মাইন্ডের কথা বেরিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব মহামান্য আদালত মাস্টার মাইন্ডসহ সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি দিবেন ।’

দাউন্দকান্দি যুবলীগ নেতা জামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শ্যুটার দেলুসহ আরও দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর দুজন হলো গাড়িচালক সুমন হোসেন ও একই ঘটনায় অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম সৈকত। গাড়িচালক সুমন হোসেন গাড়িতে করে আসামিদের বহন করার কথা আদালতে স্বীকার করেন। অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম সৈকত মাসুদের বাড়িতে অস্ত্রের ব্যাগ হত্যা শেষে পৌঁছে দেওয়া ও পরবর্তীতে মহাসড়কের পাশে লুকিয়ে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। এখন পর্যন্ত জামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।’

কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেস বড়ুয়া জানান, ‘আমরা গভীরভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছি। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। আশা করি জামাল হোসেন হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন খুন হন। তিনজন বোরকা পরে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করেন। নিহত জামাল হোসেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিতাস উপজেলায় বাড়ি হলেও তিনি ব্যবসায়িক সূত্রে পাশের দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর বাজারের পাশে ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাজহারুল ইসলাম সৈকত বরকামতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের অনুসারী। চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মাসুদ যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলার ১০ নম্বর আসামি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিভিন্ন হামলা-নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ববি ছাত্রদল

বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির আভাস

পাওনা টাকা চাওয়ায় দোকানিকে পিটিয়ে মারল যুবলীগ কর্মী

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী

সব জাতিগোষ্ঠীর সমঅধিকার নিশ্চিতে কাজ করে বিএনপি : টুকু

লেভানদোভস্কির হ্যাটট্রিকে বার্সার সহজ জয়

সিলেটে যৌথ বাহিনীর অভিযান, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

নওগাঁয় সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

হিন্দুদের পাশে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছায়া হয়ে থাকবে : দুলু

শিল্পাঞ্চলে শান্তি ফেরাতে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : সাইফুল হক

১০

মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় বাবার ওপর হামলা

১১

পাহাড়ি ঢলে হারিয়ে গেল ১৬ বাড়ি

১২

আবাসিক হল ছাত্রলীগমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ

১৩

সিভাসু থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম

১৪

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ

১৫

ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপি নারায়ণ চন্দ্র আটক

১৬

চট্টগ্রামের রেলওয়ে শ্রমিক দলের সমাবেশ মঙ্গলবার

১৭

হেসে খেলেই টাইগারদের হারিয়ে দিল ভারত

১৮

শিল্পকলায় নবনিযুক্ত পরিচালকের সঙ্গে মতবিনিময় সভা

১৯

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

২০
X