বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে রোববার (২৯ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়। তবে শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাত থেকে যান নিয়ে অপেক্ষমাণ ছিলেন চালক-যাত্রীরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টানেলে প্রবেশের সময় সবার চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস।
টানেলে প্রথম যাত্রী হিসেবে প্রবেশ করেন মুন্সিগঞ্জের জুয়েল রানা। ওই গাড়ির চালক মো. শাহেদ। ভোর ছয়টার পর থেকে দুই প্রান্ত থেকে যান চলাচল শুরু হয়। প্রথম দিন অনেকে নিজেদের পরিবহন নিয়ে টানেল পার হন। সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৮০টি পরিবহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয় ২১ হাজার ৩০০ টাকা।
টানেলে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে দেশের দূরদূরান্ত থেতে কাজের সূত্রে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামে এসে ফেরার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন কেবল টানেলে প্রথমদিনের যাত্রী হতে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল বা রাত জাগার কষ্ট বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়ায়নি এসব মানুষের কাছে। চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা দুই প্রান্তেই নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পারাপারে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ।
সকাল ৯টার দিকে প্রথম পণ্যবাহী ট্রাক হিসেবে বিআরটিসির দুইটি ট্রাক প্রবেশ করে টানেলে। ট্রাকের চালক শফিক জানান, ঢাকা থেকে সার পরিবহনের জন্য আনোয়ারা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের কাফকোতে যাচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, ‘টানেল পার হতে বেশ ভালোই লেগেছে। আগে চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে শাহ আমানত সেতু দিয়ে আসতে ২-৩ ঘণ্টা সময় অতিরিক্ত লাগত। এখন মাত্র ৫ মিনিটে টানেল পার হয়ে দ্রুত আনোয়ারা প্রান্তে কাফকোতে পৌঁছা যাচ্ছে।’
এর আগে মুন্সিগঞ্জের জুয়েল রানা বন্ধুদের নিয়ে রাত তিনটা থেকে অপেক্ষা করে ভোর ছয়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দিয়ে পারাপার হয়। জুয়েল রানা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘রাত তিনটা থেকে অপেক্ষা করে প্রথম টোল দিয়ে পার হয়েছি। ভালোই লাগছে। কখনো কল্পনাও করিনি।’
সরেজমিনে দেখা যায়,সকাল থেকে টানেল পার হওয়া অধিকাংশ গাড়ি ছিল ব্যক্তিগত। তারা পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে টানেল দেখতে ভ্রমণে এসেছেন বলে জানান। এসব গাড়ি টানেলে টোল আদায়ের পর আনোয়ারা চাতরী চৌমহনী প্রান্ত ঘুরে আবার টানেল দিয়ে চলে যায়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চলাচলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ছিল বিমানবন্দরগামী বিদেশ যাত্রী ও ওমরাহ পালনের জন্য হজের যাত্রীবাহী বাস। প্রথম পার হওয়া যাত্রীবাহী বাসটি ফুল ও রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা সকাল ছয়টার সময় যান চলাচলের জন্য টানেল খুলে দিয়েছি। এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা টানেল চালু থাকবে। তবে গাড়ি কম থাকায় টোলের লেন সবগুলো চালু করা হয়নি। তবে টানেলের ভেতর কোনো যানবাহন দাঁড়াতে পারবে না।’
এর আগে শনিবার (২৮ অক্টোবর) ১১টা ৪০ মিনিটে পতেঙ্গা প্রান্তে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর টানেল দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে টোল আদায় করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি।
টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন