পঞ্চগড়ে একটি ধানক্ষেত থেকে আট ফুট দৈর্ঘ্যের অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের আমতলা এলাকা থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেটি রামসাগর জাতীয় উদ্যানে উন্মুক্ত করেন।
স্থানীয়রা জানান, ধানক্ষেতের বেড়ায় সাপ দেখে স্থানীয়রা শহিদুল ইসলাম নামের একজনকে জানান। তিনি সাপটি ধরে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।
বন বিভাগ পঞ্চগড় রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মধুসূধন বর্মন বলেন, ‘অজগর সাপটি উদ্ধার করার পর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হলে আমরা দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে পাঠিয়ে দিয়েছি। বার্মিজ অজগরের জন্য সে জায়গাটি নিরাপদ স্থান।’
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, বার্মিজ অজগর (Burmese python) সাধারণ অজগর (Rock Python) বা ময়াল সাপের চেয়ে তুলনামূলক ভারী। সুন্দরবনে এই প্রজাতির অজগরের আধিক্য বেশি। তবে দেশের ম্যানগ্রোভ বন, ঘাসযুক্ত জমি, চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ পাহাড়ি বনেও এদের দেখা পাওয়া যায়। নির্বিষ এই সাপটি নিশাচর ও খুবই অলস প্রকৃতির, প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা নড়াচড়া করে না। এই প্রজাতিটি একাকী বাস করলেও শুধু প্রজননকালে জোড়া বাঁধে। সাধারণত মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এদের প্রজননকাল। সাপটি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে না। খাদ্য হিসেবে এরা সাধারণত ইঁদুর, মুরগি, শূকর, শিয়ালসহ ছোট থেকে বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, সরীসৃপ প্রাণী ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এটি নিজের আকারের চেয়েও অনেক বড় প্রাণী খুব সহজেই গিলে খেতে পারে।
তিনি বলেন, চামড়ার জন্য সাপটি পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের বনাঞ্চল থেকে এটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর তফসিল-২ অনুযায়ী এ বন্যপ্রাণীটি সংরক্ষিত, তাই এটি হত্যা বা এর যে কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি অজগরের লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা প্রসঙ্গে জোহরা মিলা বলেন, ‘পাহাড় ও বন উজাড় হওয়ার কারণে সাপের আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে তাদের খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই খাবারের সন্ধানে সাপগুলো লোকালয়ে আসছে। হয়তো খাবারের খোঁজেই সাপটি ধানক্ষেতে গিয়েছিল।’
মন্তব্য করুন