মহাসড়কের পাশে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ চাঁন মিয়াকে (৭৫) পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে বৃদ্ধ চাঁন মিয়ার ছোট ভাই নূরে আলম, ছেলে মঈনের কাছে তাকে হস্তান্তর করে চান্দিনা থানা পুলিশ। হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলে মঈনের বাসায় পাঠানো হয়।
চান্দিনা থানার অফিসার ওসি মো. সাহাব্দ্দুীন খাঁন জানান, যেহেতু ওই বৃদ্ধকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন সেহেতু ওই বৃদ্ধের ছেলে তার বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ইউএনও ওই দরখাস্তটি থানায় পাঠালে আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।
ছেলে মঈন জানান, আমার বাবা গত ২১ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছেন। পত্রিকায় নিউজ দেখে আমরা চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আমার বাবাকে দেখতে পাই। আমার বাবার চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, চান্দিনার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রত্যেককে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি আরও জানান, আমি একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে না থেকে নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকি। তাই বাবাকে আমার ভাড়া বাসায় নিয়ে যাই।
এদিকে, ছেলে মঈনের কথাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মহাসড়কের পাশে বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখা স্থানীয়রা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ৬ অক্টোবর সকাল থেকে হুইল চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার বড়গোবিন্দপুর স্টেশনে আমরা দেখেছি ওই বৃদ্ধকে। যারাই ওই বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাদের সকলকেই ওই বৃদ্ধ জানিয়েছিলেন তার ছেলেসহ আরও দুজন তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়ার কথা বলে রাস্তার পাশে ফেলে গেছে। ওই বৃদ্ধ শুরু থেকে তার নিজের নাম ও ঠিকানা বলেছেন। কিন্তু প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হুইল চেয়ারই ছিল তার ভরসা। একই স্থানে রোদে বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে দেখে রাইহানা ইসলাম রুনা নামে এক নারী তাকে নিজের হাতে ভাত খাওয়ান এবং তার বিষয়ে প্রশাসনসহ সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হন।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাপস শীল জানান, আমি গত ১৪ অক্টোবর রাতে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে ওই বৃদ্ধের মুখ থেকে বিস্তারিত শুনে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করি। ওই বৃদ্ধকে কেউ না কেউ অবশ্যই ফেলে গেছেন। তবে যেহেতু তার ছেলে ও ছোট ভাই এসেছেন সেহেতু আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন