ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা মামলার এক আসামিকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মহসিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে।
রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন গলাচিপা উপজেলার পক্ষিয়া গ্রামের মৃত এজাহার আলী হাওলাদারের ছেলে এম. নেছার উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে এম. নেছার উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ‘হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মহসিন। টাকা নিয়েও চার্জশিটে নাম দিয়েছেন তিনি। তাই ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গেলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে এম. নেছার উদ্দিন আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর গলাচিপা থানায় দায়েরকৃত মামলায় (নং-০৬) আমি ও আমার চার ভাইদের নামে স্থানীয় দুধা পল্লানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়। অথচ মৃত দুধা পল্লানের ছেলে, ভাই ও মাসহ সবাই হত্যার ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই বলে তদন্ত কর্মকর্তা মহসিন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ মামলায় তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই উপপরিদর্শক মহসিন আমাকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তিনি আমাদের হত্যা মামলা থেকে খালাস হওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত টাকা দিতে আমি অপরাগতা জানালে উপপরিদর্শক মহসিন আমার স্ত্রী শাহিনুর বেগমের কাছে আমাকে মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করে। পরে আমার স্ত্রী এসআই মহসিনকে এককালীন ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দেয়। পরবর্তীতে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হলে ঘুষের টাকা মহসিনের কাছে ফেরত চায় আমার স্ত্রী।
পরে এসআই মহসিন আমার স্ত্রীকে নগদ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে বাকি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই টাকা ফেরত দেননি তিনি। এখন টাকা চাইতে গেলে উল্টো, আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অন্য (পেইন্ডিং) মিথ্যা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
এমনকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার হুমকি দেয় বলেও এসআই মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন নেছার উদ্দিন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে নেছার উদ্দিন বলেন, ‘ঘুষ গ্রহণ এবং হুমকিসহ সার্বিক ঘটনায় এসআই মহসিনের বিরুদ্ধে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর গত ২৬ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গলাচিপা থানার উপপরিদর্শক মহসিন হাওলাদার বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনকালীন দায়েরকৃত একটি মামলার ঘটনা। সেই সময় স্থানীয় পালোয়ান, দর্জি ও মাতুববর বংশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুধা পল্লানের মৃত্যু হয়। পরে চার্জশিটে ২৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। যার মধ্যে নেছার উদ্দিনও রয়েছেন। এখানে ঘুষ লেনদেন বা ক্রসফায়ার হুমকির প্রশ্নই আসে না।’
গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গাইন বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন যোগদান করেছি। আর যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেটা আমি থানায় যোগদানের পূর্বের ঘটনা। তবে নেছার উদ্দিনের দেওয়া অভিযোগের ভিক্তিতে তদন্ত চলছে। তদন্তের আগে কিছুই বলা যাবে না।’
মন্তব্য করুন