ফেনীর সোনাগাজীতে কুঠির হাট বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠেছে। শনিবার (৭ অক্টোবর) পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ছয়টি শূন্যপদের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সভাপতির অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করছে কর্তৃপক্ষ। যদিও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব পরীক্ষা গ্রহণকারী ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডিজির প্রতিনিধি উপস্থিত কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে ছয় পদে ৩০ জন চাকরি প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের কুঠির হাট বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ছয়টি শূন্যপদে শনিবার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে ছয়টি পদে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুক্রবার রাত থেকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব অপারেটর, নৈশপ্রহরী, আয়া, নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহায়কের ছয়টি পদে গত ২১ জুন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৯ জন, ল্যাব অপারেটর পদে চারজন, নৈশপ্রহরী পদে চারজন, আয়া পদে চারজন, নিরাপত্তাকর্মী পদে পাঁচজন এবং অফিস সহায়ক পদে চারজন চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ঢাকার ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন রতন ঢাকায় থাকায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিতে চাইলেও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাজি না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও কালবেলার প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদকের হাতে আসা অডিও রেকর্ডে দেখা যায়, আয়া পদের জন্য শিল্পী রানীর স্বামী দীপক নাথ প্রধান শিক্ষকের প্রতিনিধিকে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এই পদের জন্য এক লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ‘যেসব পদে নিয়োগ হবে তারা আগে থেকেই বিদ্যালয়ে কর্মরত এবং প্রধান শিক্ষককে বিভিন্নভাবে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন।’
বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইন মোহামদ আলমগীর বলেন, ‘সভাপতি অনুপস্থিত থাকায় এবং ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে বিতর্ক ওঠায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সভাপতি ঢাকা থাকায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাজি না হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘সভাপতি অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন রতন বলেন, ‘আমি ঢাকার একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করতে যেতে পারিনি। তাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘নিয়োগ কমিটি বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে জেনেছি সভাপতির অনুপস্থিতি ও ঘুষ লেনদেনসংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপের বিতর্ক ওঠায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ প্রক্রিায়ায় না হলে আরও বেশি বিতর্ক হবে।’
মন্তব্য করুন