দুই হাতের কব্জি নেই সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের ধোবাইর গ্রামের আকাশ ইসলামের। কখনো মা, কখনো আবার স্ত্রীর সাহায্যে চলতে হয় তাকে। তবে বছর কয়েক আগেও নিজের হাতেই সবকিছু করতে পারতেন আকাশ। ২০১৬ সালের (৪ নভেম্বর) আকাশকদের ৪ শতাংশ জমি দখলে নিতে জোরপূর্বক বালি ভরাট শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী হাফিজুল বাহিনী। জমিতে বালি ভরাটে বাধা দিলে দিনে দুপুরে তুলে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আকাশের দুহাতের কব্জি কেটে দেয় হাফিজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম (সাফু), মুজিবর রহমান, সুজন, দয়াল ও জুয়েল গংরা।
এরপর থেকেই অন্যের সাহায্যে চলতে হয় আকাশকে। শুধু আকাশ একা নয়, জমি দখলে বাধা দেওয়ায় গুলি করে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয় আকাশের মায়ের দুই পা। তার আগে ওই জমির জন্যই আকাশের বড় ভাই মতিউরকে গুম করা হয় বলে দাবি আকাশের পরিবারের। যার খোঁজ মেলেনি আজও।
এই ঘটনায় মামলা হলে গ্রেপ্তার হয় অপরাধীরা। জামিনে বেরিয়ে এসে এবার আকাশের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। যে কারণে চরম অনিরাপত্তায় ভুগছে আকাশ ও তার পরিবারের লোকজন। প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী আকাশের পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আকাশকে দুপুরের খাবার খাইয়ে দিচ্ছে তার মা। খাওয়া শেষে স্ত্রীর সঙ্গে খাটে বসে একমাত্র পুত্র সন্তানের খুনসুটি দেখলেও দুহাতে আদর করতে না পারার আক্ষেপ আকাশের। যে জমি রক্ষা করতে গিয়ে হারিয়েছেন দুই হাত সেই ৪ শতাংশ জমিতে টিনের ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন আকাশের পরিবার। অর্থাভাবে দেওয়া হয়নি ঘরের কয়েকটি কক্ষের টিনের চালা। তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই নিখোঁজ, নিজের দু'হাত নেই। যে কারণে খুব কষ্টে চলে আকাশের পরিবার।
আকাশ বলেন, সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি মনে পড়লে আজও বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে। আমাদের জমিতে জোরপূর্বক বালি ভরাট শুরু করে হাফিজুল ও তার ভাই সাইফুল। আমি বাধা দিলে আমাকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় হাফিজুলের বাড়িতে। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল মুজিবর, জুয়েল, সুজন ও দয়ালসহ আরও কয়েকজন। পরে ঘরের ভেতরে সোফার সঙ্গে বেঁধে চাপাতি ও বটি দিয়ে কুপিয়ে আমার দুহাতের কব্জি কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা। এখন আমি বেঁচে থাকতেও মরা। আমার দু'হাত দিয়ে আমি কিছুই করতে পারি না। অন্যের সাহায্যে চলতে হয় আমাকে। আমার একমাত্র সন্তানকেও আমি আদর করতে পারি না। এখন আবার সন্ত্রাসী হাফিজুল বাহিনী জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আমাকে, আমার পরিবার লোকজনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যাদের জন্য আজ আমার এই পরিস্থিতি আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আকাশের মা হাসিনা বেগম বলেন, এই জমির জন্য আমার বড় ছেলেকে গুম করেছে সন্ত্রাসী হাফিজুল বাহিনী। আমার ছোট ছেলে আকাশের দুহাতের কব্জি কেটে দিয়েছে। জমি দখলে বাধা দেওয়ায় আমার দুই পায়ে গুলি করে ঝাঁজরা করে দিয়েছে। আমি এখন ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। এখন আবার বিভিন্নভাবে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই।
আকাশের স্ত্রী তানহা বলেন, আমার স্বামীর সব কাজ আমি আর আমার শাশুড়ি করে দেই। আমি যখন না থাকি তখন আমার শাশুড়ি করে। সন্ত্রাসী হাফিজুল ও তার লোকজন যতদিন জেলে ছিল ততদিন আমরা ভালোই ছিলাম। জেল থেকে বের হওয়ার পরে আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। বলে আমাদের যেখানে পাবে মেরে ফেলবে। আমার স্বামীকে বলে আগেতো হাত কেটে ছেড়ে দিছি এবার জানে মেরে ফেলব। আমরা ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হই না।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, হুমকির ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন